আজ ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল সিলেট বিভাগের এই দুই অঞ্চল।
সুনামগঞ্জের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর শহরে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভোর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন দিক থেকে শহরে প্রবেশ করেন। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের বিষয়টি বুঝতে পেরে রাতেই সুনামগঞ্জ শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করার পর স্থানীয় ছাত্র-জনতা মুক্তির আনন্দে শহরের রাস্তায় নেমে আসেন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিকামী জনতার ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয় পুরো শহর।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলাও। তবে এর আগে হানাদার বাহিনীর সাথে লড়াই করে নিহত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষ।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার কুমুদ রঞ্জন দেব জানান, ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিলের পর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান হানাদার বাহিনী শ্রীমঙ্গলে হত্যা করেছিল অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নারী-পুরুষকে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে সূচিত অসহযোগ আন্দোলন শ্রীমঙ্গলে তীব্র রূপ নেয়।
অফিস-আদালতসহ শ্রীমঙ্গলের চা শিল্পে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনী দেশব্যাপী গণহত্যা চালিয়েছিল। শ্রীমঙ্গলে ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া চা-বাগান এলাকায় বধ্যভূমিতে ৪৭ জন চা শ্রমিককে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে গুলি ছুঁড়ে হত্যা করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। ভাড়াউড়া চা-বাগানে কলেজ রোডস্থ সেখানে নির্মিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধ আজও তার স্বাক্ষী বহন করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন সমরু জানান, শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের হবিগঞ্জ রোডের ওয়াপদার অফিসের পেছনে একটি ছড়ায় ও বর্তমান বিজিবি সেক্টরের সাধু বাবার বটতলা খ্যাত (বর্তমান নামকরন বধ্যভূমি-৭১), সিন্দুর খান জয়বাংলা বধ্যভূমি, পূর্বাশা বধ্যভূমিসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পাক বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল। আর সেখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় অর্জুন দাসসহ বহু বীর সেনানীকে। পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শ্রীমঙ্গলে বীর মুক্তিযোদ্ধা সমীর সোম ও মুকিত লস্করসহ একে একে শহীদ হন আনিস মিয়া, ছাত্রলীগ নেতা মইনউদ্দিন, শম্ভু ভূমিজ, আব্দুস শহীদ, সুখময় পাল, সুদর্শন ও আলতাফুর রহমানসহ আরও অনেকে। মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াই ও ভারতের সীমান্ত থেকে মুক্তি বাহিনী ক্রমশ ক্যাম্প অভিমুখে এগিয়ে আসার খবরে পাক বাহিনী ভীত হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে ৬ ডিসেম্বর ভোরে তারা পালিয়ে মৌলভীবাজারে আশ্রয় নেয় এবং মুক্ত হয় শ্রীমঙ্গল শহর। উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে শ্রীমঙ্গলে সাধু বাবার থলীর (বিজিবি ক্যাম্পের পাশে) ২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ করা হয় বধ্যভূমি-৭১ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।