দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের প্রচারণা শুরু করতে আজ বুধবার সিলেট আসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরাবরের মতো হযরত শাহজালাল র. ও শাহপরাণ র. মাজার শরীফ জিয়ারতের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন। তাঁর এই আগমন উপলক্ষে নেতাকর্মীরা যেমন উজ্জীবিত, তেমনি প্রত্যাশার ঝুড়ি নিয়ে অপেক্ষায় সিলেটবাসিও।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে সিলেট শহর। আলিয়া মাঠ ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো নিরাপত্তার তত্ত্বাবধানে রয়েছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আলিয়া মাঠের পার্শ্ববর্তী সড়কগুলো।
এদিকে রাত পেরিয়ে বুধবার দুপুরেই সিলেটে আসবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল সোয়া ১১টায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। বিমান থেকে নেমে প্রথমে তিনি হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে যাবেন হযরত শাহপরান (র.) এর মাজারে। পরে বেলা ২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী আলিয়া মাঠে এসে পৌছাবেন। নির্বাচনী বিধিনিষেধের কারণে ব্যানার-ফেস্টুনবিহীন সাদামাঠা এই স্মার্ট সিটিতে হজরত শাহজালাল ও শাহপরাণ (র.) মাজার জিয়ারতের মাধ্যমেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেটে আগমন উপলক্ষে সাজানো হয়েছে পুরো নগরকে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সিলেট নগরের প্রতিটি পয়েন্টকে সাজানো হয়েছে। করা হয়েছে রাস্তা মেরামত, লাগানো হয়েছে রাস্তার মধ্যখানে বিভিন্ন ধরনের লাইট। জোরদার করা হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে এ জনসভাকে ঘিরে দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
নির্বাচনের মুহূর্তে এটি সিলেট বিভাগের একমাত্র জনসভা, যেখানে দলের প্রধান শেখ হাসিনা সরাসরি উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেবেন। নেতাকর্মীদের দেবেন নানা নির্দেশনা, ভোট চাইবেন সিলেটবাসীর কাছে। এ জন্য এই জনসভায় ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। সিলেট ছাড়াও সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা মিছিল-শোডাউন করে জনসভায় অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
একসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেটে আগমন উপলক্ষে জেলাজুড়ে সাজ সাজ রব পড়ে যেত। সিলেট পরিণত হতো উৎসবের নগরে। চারদিকে বিলবোর্ড, ফেস্টুন, পোস্টারে সয়লাব হয়ে যেত। নির্মাণ করা হতো সুবিশাল মঞ্চ। কিন্তু নির্বাচন উপলক্ষে এবারের সিলেট সফরে চিরচেনা সেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে।
জনসভাকে সামনে রেখে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী সাদাকালো পোস্টার ছাপিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে মাঠের পূর্ব দিকে নির্মিত মঞ্চে সর্বসাকল্যে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০টি চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জনসভাস্থল ও এর আশপাশ এলাকা পর্যন্ত লাগানো হয়েছে মাইক। জনসভা আয়োজনে নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আচরণবিধি মেনে জনসভা আয়োজনের নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নগরজুড়ে চার স্তরের স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, টহল পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠে রয়েছে। নগরে বৃদ্ধি করা হয়েছে পুলিশের টহল। সাদা পোশাকে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। জনসভা মঞ্চ ও আশপাশ এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের কড়া নজরদারি থাকবে।’
জনসভা মঞ্চে সিলেট বিভাগের ১৮ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা উপস্থিত থাকবেন। জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হবিগঞ্জ-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থীও জনসভা মঞ্চে থাকবেন বলে জানা গেছে।
ইতিমধ্যে প্রার্থীদের নির্দিষ্টসংখ্যক লোক সমাগম করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। পাশাপাশি প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদেরও কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জনসভায় হাজির হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জনসভায় অন্তত ১০ লাখ মানুষের জনসমাগম ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে কেন্দ্রীয় নেতারা এসে মাঠ পরিদর্শন করেছেন। এই জনসভা দলের নেতাকর্মীসহ ভোটারদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা বাড়বে।’
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান বলেন, সব প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর আগমনের অপেক্ষায়। এই জনসভায় লাখ লাখ মানুষের জনসমাগম ঘটবে। প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভার মধ্য দিয়ে দলের নেতাকর্মীসহ ভোটারদের মাঝে ব্যাপকভাবে উৎসাহ বাড়বে।
এদিকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীকে সিলেট অঞ্চলে নৌকা প্রতীকের নিরঙ্কুশ বিজয় উপহার দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।