এক বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে কাতারকে কতো কিছুই না করতে হচ্ছে। কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচের পাশাপাশি সহ্য করতে হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বসহ অন্যদের নানান সমালোচনাও। সবকিছু ছাপিয়ে এখন ফুটবল উৎসব দেখার অপেক্ষা। আজ রোববার (২০ নভেম্বর) সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। পারস্য উপসাগরের তীরে বিশ্বকাপের মহারণে সামিল হতে যাচ্ছে সবাই।
১৯৩০ সালে যার গোড়াপত্তন হয়েছিল। ২০২২ সালে এসে তা ২২তম আসরে গিয়ে ঠেকেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে এই বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এক মহাযজ্ঞ। যেই আকর্ষণ শুধু চুম্বকের মতো টানেই না, নিয়ে যায় অতলেও।
বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে রোমাঞ্চ তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে বাড়ছে টেনশনও। কাতার কি পারবে ঠিকঠাক বিশ্বকাপ শুরুর সঙ্গে শেষটাও করতে? কাতারের জন্য যা বাড়তি চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জে ৩২টি দেশ আটটি স্টেডিয়ামে ২৯ দিনের লড়াইয়ে নিজেদের সপে দিতে যাচ্ছে। প্রথম দিনেই মাঠে নামতে যাচ্ছে স্বাগতিক কাতার ও ইকুয়েডর। ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায়। তার আগে রাত আটটায় অনুষ্ঠিত হবে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও।
১৯৭১ সালে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর কাতার একটু একটু করে নিজেদের গড়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। অফুরন্ত প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি করে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশের তালিকায় কাতারিদের নাম রয়েছে।
আর তাই তো বিশ্বকাপের মতো বড় আসর সফল করতে ২১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে তাদের কুণ্ঠা নেই। আয়তনে ঢাকার প্রায় চারগুণ কাতার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এতো কম আয়তনের দেশে যে আগে কখনও এমন আসর হয়নি! আর তা সফল করতে স্বাগতিকদের চলছে রাত-দিনের প্রচেষ্টা।
কাতারিদের পাশাপাশি এখানে প্রবাসীদেরও বিশ্বকাপ নিয়ে উত্তেজনা কম নয়। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর। ফিফা ফ্যান জোনে তো এ নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ। পুরো দেশেই এখন বলতে গেলে বিশ্বকাপের আমেজ। দোহার রাস্তায় রাস্তায় মাঝে মধ্যে চোখে পড়বে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের জার্সি গায়ে সমর্থকদের হই-হুল্লোড়।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে নতুন করে হয়েছে সাতটি স্টেডিয়াম। আর পুরনো স্টেডিয়ামটির হয়েছে বড় সংস্কারও। হয়েছে মেট্রোরেল, হোটেল, রাস্তাঘাটসহ অনেক কিছুই।
আর সবার কথা চিন্তা করে এই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ হচ্ছে শীত মৌসুমে। যদিও এখন কাতারের আবহাওয়া কম উত্তপ্ত নয়। তবে স্টেডিয়ামগুলো তাপানুকূল করে রাখায় গরমের তেজটা সেভাবে অনুভব হবে কমই।
এমন আয়োজন দেখে কুয়েতের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক নাদুম খলিল তো ইতিবাচক বার্তাই দিলেন। মেইন মিডিয়া সেন্টারের বাইরে ঢোকার মুখে জানালেন,কাতার বেশ ভালোভাবেই সবকিছু আয়োজন করছে। তবে আমাদের এখান অনেকেই আবার তা দেখে হিংসা করে। তবে আয়োজনকে তো ভালো বলতে হবে।
বিশ্বকাপের রং উজ্জ্বল করতে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা শহরে পা দিয়েছে। অন্যরাও এসেছে। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের সামনে হেক্সা জয়ের মিশন। ২০০২ সালের পর নেইমার-পাকেতাদের হাতে ট্রফি দেখার অপেক্ষায় সমর্থকরা। আর ১৯৮৬ সালের পর লিওনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখলে আনন্দে আত্মহারা হবে অন্য সমর্থকরা। তাদের চোখ রাঙানি দিতে এমবাপ্পে-করিম বেনজেমা কিংবা লুকাকু, কেইনরা কম যাবেন কেন।