দুর্গাপূজায় আনুষ্ঠানিকতায় আজ মহাসপ্তমী। নবরাত্রির সপ্তম তিথি। ষষ্ঠীতে দেবীর মুখ উন্মোচন ও বোধন প্রক্রিয়া অতিক্রান্ত করে পূজার দিনক্ষণ পড়ল মহাসপ্তমীতে। ধূপ, পঞ্চপ্রদীপ, উলুধ্বনি আর ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে বাজছে শঙ্খনাদ। মণ্ডপে মণ্ডপে উচ্চারিত হচ্ছে পুরোহিতের মন্ত্রধ্বনি। সকাল থেকেই বিভিন্ন মণ্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা পূজা উদযাপন করছেন।
মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে পূজা হবে দেবীর। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। এরপর দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা।
সপ্তমী পূজা উপলক্ষে নানা রঙের পোশাক পরে বিভিন্ন বয়সী মানুষ সকাল থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে হাজির হচ্ছেন। গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে পূজার আনন্দ অনেকটা ফিকে থাকলেও এবার কোনো ধরনের বিধিনিষেধ ছাড়াই হচ্ছে পূজা উদযাপন।
গত বছরের চেয়ে এবার বেড়েছে মণ্ডপের সংখ্যাও। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেবীবন্দনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাব মতে, দেশে এবার প্রায় ৩২ হাজার ১৬৮ মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এই সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৫০টি বেশি। ঢাকা মহানগরে এবার পূজা হবে ২৪১টি মণ্ডপে যা গতবারের চেয়ে ৬টি বেশি। গতবার সারাদেশে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি।
এর আগে শনিবার উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাকঢোলের বাজনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ষষ্ঠীপূজা। এর মধ্যদিয়ে শুরু হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। এ সময় ঢাকঢোলের বাজনা, কাঁসা, শঙ্খের আওয়াজ এবং ভক্তদের উলুধ্বনিতে দেবী দুর্গাকে পৃথিবীতে স্বাগত জানানো হয়। সন্ধ্যায় হয় দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস।
এ দিন কল্পারম্ভ দিয়ে শুরু হয় দুর্গার বোধন। ষষ্ঠীর সকালেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তার পর দেবীর সামনে প্রার্থনা করা হয় যে, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত গোটা পূজা পর্বে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে।
শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে দেবী দুর্গা বাপের বাড়ি বেড়াতে মর্ত্যলোকে এসেছেন। আর এর মাধ্যমেই শুরু হয় দুর্গাপূজার মূল আয়োজন।
প্রতিবারের মতো এবারও প্রস্তুত করা হয়েছে মহামায়া দেবী দুর্গাসহ লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা। সন্ধ্যায় ভক্ত ও দর্শনার্থীদের জন্য বাহারি সব রং দিয়ে সাজানো হয়েছে এসব প্রতিমা। রং- বেরঙের আলোকসজ্জা আর নানা রঙের ডিজাইনের কাঠামো দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো পূজাঙ্গন।
পুরান অনুযায়ী, এবার দেবী মর্ত্যে এসেছেন গজে চেপে। দুর্গা গজে চড়ে এলে সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনেন। আর ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী মর্ত্য ছাড়বেন নৌকায় চড়ে। নৌকায় গমনেও ধরনী হবে শস্যপূর্ণ তবে থাকবে অতিবৃষ্টি বা বন্যা।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, শনিবার মহাষষ্ঠীতে সকালে দুর্গা দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ এবং ষষ্ঠীবিহিত পূজা, সন্ধ্যায় দেবীর বোধন। রোববার মহাসপ্তমীবিহিত পূজা, সোমবার মহাষ্টমীবিহিত পূজা, মঙ্গলবার মহানবমীবিহিত পূজা এবং বুধবার দশমীবিহিত পূজা সমাপন এবং প্রতিমা বিসর্জন।