সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোর প্রয়োজনে গেল আগস্ট মাসে ব্যাপক অভিযান ও কার্যক্রম পরিচালনা করে ১ কোটি ২২ লক্ষ টাকা (প্রায় সোয়া কোটি) জরিমানা আদায় করেছে সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।
এসএমপি সূত্র জানায়, রেজিস্ট্রেশন বিহীন যানবাহন, ট্রিপল রাইডিং, হেলমেট বিহীন মটর সাইকেল চালানো, গাড়ীতে কালো গ্লাস পেপার লাগানো, যানবাহনে ওভার লোডিং, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো, হাইড্রোলিক হর্ণের ব্যবহার সহ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পরিপন্থী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আগস্ট মাসে ব্যাপক অভিযান চালায় এসএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ।
অভিযানকালে নগরীর এয়ারপোর্ট রোডে, হুমায়ুন চত্বরে, মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে, কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড, তেমুখী এলাকায় প্রতিদিন চেকপোস্টের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন আইন জোরালোভাবে প্রয়োগ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগস্ট ২০২১খ্রি. এর তুলনায় এবছর আগস্ট ২০২২খ্রি. মাসে ১,৫৫১টি মামলা বেশী রুজু করা হয়েছে এবং ১,০৮৩টি যানবাহন বেশী আটক করা হয়েছে। এছাড়াও রুজুকৃত জরিমানার পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ১০,০৪,৫০,২০০ টাকা বেশী এবং আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ১২,৬৮,৯৫০ টাকা বেশী।
সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় চলাচলকৃত যানবাহনের সংখ্যা, প্রকৃতি এবং বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ট্রাফিক বিভাগ মোট ০৯টি ধারায় (সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮) মামলা রুজু করে থাকে। এর অংশ হিসেবে গত ০১ আগস্ট ২০২২ থেকে ৩১ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত মোট ৫,১৬৫টি মামলা রুজু এবং ৩,৩৭১ টি যানবাহন আটক করা হয়। রুজুকৃত জরিমানার পরিমান ২,৩১,৭৪,৭৫০ টাকা ও আদায়কৃত জরিমানার পরিমান ১,২২,৯৩,৩০০ টাকা।
ট্রাফিক বিভাগ জানায়, রুজুকৃত ধারা সমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ৯২(১) ও ৯২(২) ধারায় মোট ২,২৩২টি মামলা রুজু হয় যা মোট মামলার প্রায় ৪০% অর্থাৎ হেলমেট ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত যাত্রি পরিবহন এবং উল্টোপথে মোটরযান চালানো চালকের সংখ্যাই বেশী। এছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন, রেজিষ্ট্রেশন বিহীন (১২৫টি) সহ মোট ১২৬১টি সিএনজিতে প্রসিকিউশন দাখিল করা হয়। ৫৬৯টি প্রাইভেট কার, ১৬৩টি মাইক্রোবাস, ১৯টি ট্রাক, ০৫টি বাস, ৮২টি লেগুনা/পিকআপ এবং ১৫টি টেম্পুতে প্রসিকিউশন দাখিল করা হয়। তন্মধ্যে ২৩৪টি যানবাহনে অনুমোদনহীন কালো গ্লাস পেপারের জন্য সড়ক পরিবহন আইন’২০১৮ এর ৮৪ ধারায় প্রসিকিউশন দাখিল করা হয়। নিয়মিত মামলার পাশাপাশি ১,৭৩২টি কাউন্টার মামলা দাখিল করা হয়। সড়ক পরিবহন আইন’২০১৮ ধারা (৭২) মূলে রেজিষ্ট্রেশন না থাকায় ১০৫টি এবং ধারা (৬৬) মূলে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় ৮৫২টি প্রসিকিউশন দাখিল করা হয়, যা মোট মামলার প্রায় ১৭%।
মামলা রুজুর পাশাপাশি প্রায় ৩,৪০০টি যানবাহন যেমন, মোটরসাইকেল-১,৯৪৮টি, সিএনজি-৩১৮টি, টমটম-৭৭টি, ব্যাটারি চালিত রিক্সা-৭৯৪টি ও ব্যক্তিগত যানবাহন (প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ) ২২৭টি যানবাহন সমূহের কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় আটকের মাধ্যমে ডাম্পিং ইয়ার্ডে প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও গত- ১৪ আগস্ট ২০২২ তারিখ থেকে ৩১ আগস্ট ২০২২খ্রি. পর্যন্ত সিলেট মহানগরীর কুমারগাঁও বাস স্ট্যান্ড, কোম্পানীগঞ্জ বাইপাস, হুমায়ুন রশিদ চত্বর ও আম্বরখানা পয়েন্টে চেকপোস্ট ডিউটির মাধ্যমে ৯৪১টি প্রসিকিউশন ও ৭৫৮টি যানবাহন ডাম্পিং এর মাধ্যমে পুলিশ লাইন্সে প্রেরণ করা হয়।
সার্জেন্ট/টিএসআইদের মধ্যে টিএসআই/৯৪ শাহীনুর কবির সর্বোচ্চ ২৯৬টি মামলা রুজু করেন এবং সার্জেন্ট সঞ্জয় বিশ্বাস সর্বোচ্চ ২৯৯টি যানবাহন আটক করেন।
মামলা এবং আটকের পাশাপাশি ট্রাফিক বিভাগ, সিলেট প্রতি মঙ্গলবার যানবাহন চালক, মালিক, শ্রমিক ও পথচারীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা ও ট্রাফিক আইন সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেন। এছাড়াও স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ট্রাফিক এডুকেশন নেটওয়ার্ক (টেন) এর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।