আইনের ‘অস্পষ্টতায়’ আটকে আছে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে

বিশেষ পরিস্থিতিতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে অনুষ্ঠানের সুযোগ রেখেছে সরকার। তবে এ বিষয়ে আইন থাকলেও রয়েছে অস্পষ্টতা। এ কারণে ভুক্তভোগী অনেক অভিভাবক দিশেহারা।

রাজধানী ঢাকার সবুজবাগে বসবাস করেন মো. মাহবুবুল আলম বাদল। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন হওয়ার কারণে শেষ ইচ্ছা হিসেবে ১৬ বছরের কন্যা সন্তানকে পাত্রস্থ করতে চান। নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুল বাদশা সিকদারের ২৫ বছরের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে নিয়ে আলোচনা হয়েছে কয়েক দফা। কিন্তু উভয় পরিবারের সম্মতির পর প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে আইনগতভাবে আদালতের অনুমতি নেওয়া।

কেননা বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭-তে বিশেষ বিধান হিসেবে সংযোজিত ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনও বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিয়ে সম্পাদিত হলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না।’

এদিকে ওই ১৯ ধারা অনুসারে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রক্রিয়া মেনে চলতে বলা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, (১) বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর ১৯ ধারার বিশেষ বিধানের আলোকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উপযুক্ত আদালতে উভয়পক্ষের পিতা-মাতা/আইনগত অভিভাবক বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্কসহ উভয়পক্ষ অথবা বিবাহের পাত্র-পাত্রী উভয়ের যৌথ আবেদনের ভিত্তিতে কারণ উল্লেখপূর্বক দালিলিক প্রমাণসহ (যদি থাকে) আবেদন করতে পারবে। আদালত আবেদনটির সত্যতা যাচাইয়ের নিমিত্তে বিধিতে গঠিত ‘যাচাই কমিটি’তে প্রেরণ করবেন। এরপর যাচাই কমিটি বিষয়টি যাচাইঅন্তে অনধিক ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করিবেন; (৪) কমিটির প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর আদালতের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থেই বিশেষ বিধানের আওতায় আবেদিত বিবাহ হওয়া সমীচীন, সেক্ষেত্রে আবেদিত বিবাহের বিষয়ে অনুমতি প্রদান করিতে পারিবেন অথবা আদালত প্রয়োজন মনে করিলে এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত/পুনঃতদন্তক্রমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারবেন।

ওই আইনে আদালতের অনুমতির প্রসঙ্গ উল্লেখ থাকলেও ঠিক কোন পর্যায়ের আদালত থেকে অনুমতি নিতে হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছুই বলা হয়নি। তবুও প্রতিকারের প্রত্যাশা নিয়ে মাহবুবুল আলম বাদল গত ২০ মার্চ অনুমতি চেয়ে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু সে আবেদনে কোনও সাড়া পাননি তিনি।

পরে মেয়ের বাবা মো. মাহবুবুল আলম বাদল প্রতিকার খুঁজতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের ‍শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর ১৯ ধারা এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ নীতিমালা, ২০১৮ এর ১৭ বিধি অনুযায়ী অপ্রাপ্তবয়স্কদের সর্বোত্তম স্বার্থে বিয়ের জন্য উপযুক্ত কোর্ট কেন নির্ধারণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আইন মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইলিয়াস আলী মণ্ডল বলেন, আদালত আমাদের রিটটি গুরুত্বের সঙ্গে শুনেছেন। এ বিষয়ে রুল জারি করেছেন। মামলার গুরুত্ব অনুধাবন করে আদালত জারিকৃত রুলের ওপর দ্রুত শুনানি করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরাও রুল শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত মামলাটির শুনানি শেষ হবে এবং এ বিষয়ে আইনের অস্পষ্টতা দূর করা সম্ভব হবে। যার ফলে দেশের সকল ধর্মের মানুষেরা আইনটির সুফল ভোগ করতে পারবে।

আইনজীবী মো. মামুন ভূঁইয়া বলেন, নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করতেই আইন করা হয়ে থাকে। সেই আইনে যদি অস্পষ্টতা থাকে তাহলে নাগরিকদের ভোগান্তি বেড়ে যায়। তাই আইনপ্রণেতাদের উচিত কোনও আইন চূড়ান্ত করার পূর্বে তার প্রায়োগিক দিকগুলো খতিয়ে দেখা।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন