সিলেটে শেষ হয়েছে রামকৃষ্ণদেবের ১৮৮তম আবির্ভাব ও চার দিনব্যাপী বার্ষিক উৎসব। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশেষ বৃত্তি বিতরণ ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে রাষ্ট্রের পৃষ্টপোষকতায় সন্ত্রাস উসকে দেওয়া হয়েছে। মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ লালন করে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। কিন্তু, বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাম্প্রদায়িক চেতনার লালন ও বিকাশের নীতি অবলম্বন করেছেন। যার ফলে দেশে শান্তি বিরাজ করছে, দেশ আজ উন্নতি-অগ্রগতির সোপানে।’
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরের নাইওরপুলস্থ রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে চার দিনব্যাপী উৎসবের তৃতীয় দিনের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
রামকৃষ্ণদেবের ১৮৮তম আবির্ভাব ও বার্ষিক উৎসবের সমাপনী দিনে ‘যত মত তত পথ’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য্যের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম পরিচালনা কমিটির সম্পাদক, অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দ মহারাজ। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার নীরাজ কুমার জায়শয়াল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, সিলেট জেলা বারের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। মূখ্য আলোচক ছিলেন, চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমের তত্ত্বাবধায়ক স্বামী পূর্ণব্রতানন্দ।
আলোচক ছিলেন, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি, সিলেটের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম, সিলেট ক্যাথরিক ধর্ম প্রদেশের বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেস্, সিলেট বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ স্বামী সংঘানন্দ থেরো। ধন্যবাদ বক্তব্য দেন, ডা. পরেশ দেবনাথ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন অরুপ বিজয় চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহিবুর রহমান মানিক এমপি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন। বিবেকানন্দও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। রামকৃষ্ণ মিশন তার দর্শনকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে।’
রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে যখন ধর্ম আসে তখনই সংঘাত দেখা দেয়। সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়া হয়। এতে রাষ্ট্র ও সমাজে অশান্তি দেখা দেয়।’
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এমপি মানিক বলেন, ‘বাংলা অক্ষরকে যখন আরবি হরফের ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলো তখনই সংগ্রাম করে রক্ত দিয়েছে বাংলায় কথা বলার অধিকার আদায় করেছে বাঙালি। যারা এ জাতিকে গোলামীর শ্রিঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করেছে তারাই ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে।’
মুহিবুর রহমান মানিক এমপি পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন, ‘যারা এদেশ ও জাতিকে ধ্বংসের চেষ্টা করেছে তারাই আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।’ এই ধ্বংস থেকে উত্তরণে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটানোর আহ্বান জানান তিনি।
সংসদ সদস্য বলেন, ‘নানা মতের নানা পথ, কিন্তু লক্ষ্য একটাই। মানবতার জন্য কাজ করা, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করা। যারা সর্বনাশা পথ দেখাচ্ছে প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে তা পরিহার করতে হবে।’
অতিথিরা বক্তব্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে স্বামী বিবেকানন্দের দর্শন অধ্যয়ন ও অনুশীলনের তাগিদ দেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে রামকৃষ্ণ মিশন, সিলেটের বিশেষ বৃত্তি প্রদান করা হয়। ৪০ জন শিক্ষার্থীকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা করে দুই লাখ টাকার বৃত্তি তুলে দেওয়া হয়। এ বৃত্তির আর্থিক সহযোগিতা করে অজিত বীনা দত্ত ট্রাস্ট।
এসময় আজীবন শিক্ষাবৃত্তি বিতরণের জন্য রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী চন্দ্রনাথানন্দ মহারাজের কাছে ৭০ লাখ টাকার চেক প্রদান করে ট্রাস্ট। অজিত বীনা দত্ত ট্রাস্টের পক্ষে অজিত বীনা দত্তের বড় ছেলে, কানাডা প্রবাসী অলক দত্ত উপস্থিত ছিলেন।
রাতে নীলাঞ্জন দাস টুকুর পরিচালনায় কথাকলি, সিলেট নাটক পরিবেশন করে। এর আগে সকাল ১০টায় পদ্মিনী রায় ইমনের গীতি আলেখ্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় সঙ্গীতাঞ্জলি পরিবেশন করে নাট্যম সঙ্গীত বিদ্যালয়, বেলা ১টায় রামায়ন গান পরিবেশন করেন, হবিগঞ্জের কবি রত্ন মণিনাথ কৃষ্ণাল, বিকেল ৪টায় গীতিআলেখ্য পরিবেশন করেন প্রণতি ভট্টাচার্য্য।