অষ্টমবারের মতো চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হলেন এ কে এম ফজলুল্লাহ। ১৪ বছর ধরে একই পদে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তার বয়স এখন ৮১ বছর। চলতি বছর অক্টোবরে তাঁর সাতবারের মেয়াদ শেষ হবার কথা থাকলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দুই মাস আগে তাঁকে আবার নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) এ কে এম ফজলুল্লাহর পুনর্নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ শাখার উপসচিব মুস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬–এর ২৮ (২) ধারা মোতাবেক এ কে এম ফজলুল্লাহকে তাঁর বর্তমান চাকরির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর থেকে তিন বছরের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি হিসেবে পুনর্নিয়োগ করা হলো। ১ নভেম্বর থেকে তিন বছর তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ব্যাপারে এ কে এম ফজলুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অভিজ্ঞতা ও কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে সরকার মনে করেছে, আমাকে দায়িত্ব দিলে প্রকল্পের কাজগুলো ঠিকভাবে শেষ হবে। কারণ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া আমার জানা। তাই দেশের স্বার্থে আমাকে আবার দায়িত্ব দিয়েছে, যদিও আমি হাতে চিঠি পাইনি।’
১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া এ কে এম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। এরপর আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল্লাহ। সেই থেকে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
চট্টগ্রাম ওয়াসা পরিচালিত হয় ১৯৯৬ সালের ওয়াসা অ্যাক্ট অনুযায়ী। এ আইনে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমডি। আইনে এমডি পদে একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ কতবার বা কত বছর নিয়োগ পেতে পারেন, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এমডি পদে নিয়োগ দেয় সরকার।
এ কে এম ফজলুল্লাহ ওয়াসার আলোচিত কর্মকর্তা। নিজের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবির কারণে এ কে এম ফজলুল্লাহ ব্যাপক সমালোচিত হন। ওয়াসার নথিপত্র অনুযায়ী, এ কে এম ফজলুল্লাহর মূল বেতন নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, আপ্যায়ন, বিশেষ ভাতাসহ মিলিয়ে মোট পান ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা, যা ২০১৬ সালের মে মাস থেকে কার্যকর হয়।
গত বছরের জানুয়ারিতে তিনি এক লাফে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা বেতন বৃদ্ধির আবেদন করেছিলেন। অর্থাৎ মোট সাড়ে চার লাখ টাকা মূল বেতন চেয়েছিলেন। এ আবেদনের পর বোর্ড সদস্যরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। পরে সমালোচনা মুখে তিনি বেতন বাড়ানোর আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।
তাঁর আমলে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পাঁচটি বড় প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে কোনো প্রকল্পের কাজই নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হয়নি। ব্যয়ও বাড়াতে হয়েছে তিনটির। নগরে পানির সংকটও কাটেনি।