অর্থসংকটে শাবির ‘অলীক’, নাসায় যাওয়া অনিশ্চিত

অর্থসংকটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (নাসা) যোগ দেওয়া অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে ‘স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ’-১৮ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন টিম ‘অলীক’।

এর আগে ২০১৯ সালে ভিসা জটিলতার কারণে নাসায় যাওয়া থেকে ছিটকে পড়েছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এ দলটি।

জানা যায়, ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০১৮’ এ ‘বেস্ট ডেটা ইউটিলাইজেশন’ ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শাবিপ্রবির ‘টিম অলীক’। নাসার প্রদত্ত তথ্য ব্যবহার করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ্লিকেশন ‘লুনার ভিআর’ তৈরি করে চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি। যা কোনো বাংলাদেশি হিসেবেও প্রথম অর্জন।

ফলে ২০১৯ নাসার সাত দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পায় ‘টিম অলীক’। তবে ভিসা জটিলতায় সেসময় নাসায় যাওয়া হয়নি তাদের। পরে চলতি বছর আবারও ডাক পায় দলটি, তবে এবার দেখা দিয়েছে অর্থ সংকট।

এ বিষয়ে টিম অলীকের দলনেতা আবু সাবিক মেহেদী জানান, আমরা (টিম অলীক) ২০১৮ সালে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে ‘বেস্ট ইউজ অফ ডাটা’ ক্যাটাগরিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হই। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৭৯টি দেশের ১৩৯৫টি দল অংশ নেয়। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছি।

অ্যাপ্লিকেশনটি সম্পর্কে মেহেদী বলেন, এই অ্যাপ্লিকেশনটি স্মার্ট ফোনে ব্যবহার করে যে কেউ চাঁদে যাওয়ার ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতা নিতে পারবে। ব্যবহারকারীরা অ্যাপোলো-১১ ল্যান্ডিং সাইট ভ্রমণ, চাঁদপৃষ্ঠ থেকে সূর্যগ্রহণ এবং এলআরও স্যাটেলাইটের সাহায্যে চাঁদের উপর প্রদক্ষিণ করে দেখতে পারবেন। ফলে চাঁদে পরিবেশ, তাপমাত্রা, রঙ পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যাবে। যা আগে কেউ কখনও দেখেননি। এই অ্যাপ্লিকেশনটিই বেস্ট ডেটা ইউটিলাইজেশ ক্যাটাগরিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করে।

তিনি বলেন, টিম অলীক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০১৯ সালে পুরস্কার গ্রহণ ও নাসার আয়োজিত বিভিন্ন ইভেন্টে যোগ দিতে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে আমন্ত্রণ পায়। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও মার্কিন দূতাবাস ভিসার আবেদন প্রত্যাখান করায় আমরা নাসার আমন্ত্রণে সাড়া দিতে পারিনি।

মেহেদী বলেন, পরবর্তীতে ২০২৩ সালে আমরা আবারও ‘নাসা আর্থ এন্ড সায়েন্স’ কর্তৃক আয়োজিত প্রোগ্রামে আমন্ত্রণ পাই। সেখানে নাসার গবেষক এবং অন্যান্য গ্লোবাল চ্যাম্পিয়নদের সামনে আমাদের কাজগুলো উপস্থাপনের সুযোগ পাবো। আমাদের সাথে ২০২১ সালে চ্যাম্পিয়ন টিম খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টিম ‘মহাকাশ’ আমন্ত্রণ পায়। এ অনুষ্ঠানটি আগামী ১৫ থেকে ১৬ মার্চ ওয়াশিংটন ডিসি নাসার সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে আমরা সবাই মার্কিন দূতাবাস থেকে ভিসাও পেয়েছি। তবে অর্থ সংকটের কারণে এবারও আমাদের যাওয়া নিয়ে অনিশ্চতার মধ্যে পড়েছি।

অর্থ সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের লোকাল অর্গানাইজার ফান্ড কালেকশন করার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে তারা অর্থ সহায়তা করতে না পারায় আমরা অনিশ্চয়তায় পড়ি। আর্থিক সংকট সমাধান করতে পারলে বাংলাদেশ থেকে ‘টিম অলীক’ এবং ‘টিম মহাকাশ’ নাসার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ পারবে। তাই ‘টিম অলীক’ এবং ‘টিম মহাকাশ’ স্পন্সর খুঁজছে। আমরা আমাদের অফিসিয়াল পার্টনার হিসেবে স্পন্সরকারীদের স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিশেষ ব্র্যান্ডিং ও এক্সপোজার পাবে।

টিম অলীকের আরেক সদস্য এস এম রাফি আদনান বলেন, আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চ নাসার সদর দপ্তরে চ্যাম্পিয়ন টিমগুলোকে পুরস্কৃত করা হবে। তাই আগামী ১৩ মার্চে বিমানের ফ্লাইট ধরতে হবে। ফলে আমাদের হাতে সময় রয়েছে ৫ দিন। অংশ নিতে আমাদের ১৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। তবে অল্প সময়ে এ অর্থ যোগাড় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই অর্জন আমাদেরকে গর্বিত করেছে। তারা ২০১৯ সালে নাসায় আমন্ত্রণ পেয়েছিল। তখন আমরা ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলাম। তবে তারা অংশ নিতে না পারায়, আমাদের সে টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। এবার তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। যোগাযোগ করলে হয়তো কোনো একটা ব্যবস্থা করা যেত।

টিম অলীকের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এস এম রাফি আদনান, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কাজী মাইনুল ইসলাম ও আবু সাবিক মেহেদী এবং একই বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান।

সূত্র : বাংলা নিউজ