গুলশান-বনানী-বারিধারা; ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত এলাকাগুলোর অন্যতম। এসব এলাকার ৮৪ শতাংশ ভবনই পাকা ও ছয় তলার ঊর্ধ্বে। কিন্তু এসব এলাকায় অভাব রয়েছে পর্যাপ্ত সামাজিক সুবিধা, উন্নত মানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, উন্মুক্ত স্থান ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধার। এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় রয়েছে গণপরিবহন সংকটও। অল্প কিছু এসি বাস থাকলেও অধিকাংশকেই চলাচল করতে হয় মানুষ পায়ে হেঁটে, রিকশায় ও প্রাইভেটকারে।
এছাড়া এ এলাকাটিগুলোর পূর্ববর্তী পরিকল্পনা অনুযায়ী আবাসিক প্রকৃতির হলেও কিন্তু বর্তমানে এর ব্যবহার মূলত মিশ্র প্রকৃতির। এ কারণে এই এলাকায় প্রচুর ব্যাংক-বিমা, রেস্টুরেন্ট থাকলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের ব্যবসার অনুমতিপত্র বা ট্রেড লাইসেন্স দিতে পারছে না। এতে সিটি করপোরেশন একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে, অপরদিকে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা থাকায় তা সরিয়েও দিতে পারছে না।
তাই এসব সমস্যা দূর করার জন্য সদ্য অনুমোদিত ‘ঢাকা মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০১৬-৩৫ (ড্যাপ)’ এ কিছু পরিকল্পনা প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। প্রস্তাবিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গণপরিসর বাড়াতে গুলশান-২ গোলচত্বর থেকে হাতিরঝিল সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সাইকেলের পথ তৈরি করা করা যেতে পারে। গুলশান ১ থেকে ২ এবং নিকেতন এলাকায় অযান্ত্রিক যানবাহন ও পথচারী চলাচল প্রকল্প নিতে হবে। গুলশান, বনানী ও হাতিরঝিল লেকের সমন্বয়ে ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস চালু করতে হবে।
গুলশান, বনানী ও বারিধারা আবাসিক এলাকার জন্য পরিবহন, পরিবেশ, জনঘনত্ব ও বাণিজ্যিক চাহিদা বিবেচনায় রাজউক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত লে আউট প্ল্যান পরিমার্জন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রকল্পের পরিচালক ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘গুলশানে কত খেলার মাঠ, হাসপাতাল-ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাঁচাবাজার ও সামাজিক চাহিদা থাকবে তার লে আউট পরিকল্পনা করা হয়েছিল ষাটের দশকে ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের অধীনে। তখন যে জনসংখ্যা করে ভবনাদি ও স্থাপনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বর্তমানে তার পরিমাণ অনেক বেশি। তখন এক বিঘার প্লটে ছিল দুই তলার ভবন আর এখন হয়ে গেছে ২০ তলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন নতুন করে লে আউট করে কি পরিমাণ সুবিধাদি দরকার তার চাহিদা নিরূপণ করা ও এগুলোর অনুমোদন করা দরকার। কতটুকু বাণিজ্যিক অনুমোদন করা দরকার তা ওই এলাকার পরিবেশ ও পরিবহন ব্যবস্থার ওপর গবেষণা করে একটা সমন্বিত লে-আউট প্ল্যান তৈরি করার সুপারিশ করা হয়েছে। এটা করা হলে কেউ ভবন ভাড়া নিয়ে অবৈধভাবে স্কুল, করপোরেট অফিস চালাবে না।’
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘গুলশান, বনানীর জন্য যে পরিকল্পনা ছিল তা বিভিন্ন সময় সময়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন কারণে বিচ্যুতি হয়েছে। পরিকল্পনার দিক থেকে যে কোনও বিচ্যুতিই খারাপ। যেমন গুলশান কাগজে আবাসিক এলাকা হলেও এর ব্যবহার পুরোপুরি মিশ্র। পরিকল্পনার বিচ্যুতি হওয়ার পর তা গ্রহণ করা হযেছে, যদিও তা প্রয়োজনের নিরিখে। তবুও এতে পরিকল্পনার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা কমে যায়। যারা বিচ্যুতি করেছেন তাদের লঘু শাস্তি দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যবহার বৈধ করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘সাইকেল লেন, অযান্ত্রিক যানবাহন চালু, গণপরিসর, সামাজিক সুবিধাদি বৃদ্ধি ও ওয়াটার ট্যাক্সি চালু করার ভালো প্রস্তাব। এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার।’
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, ‘এখানে বাণিজ্যিক ব্যবহার অনুমোদন করা হলে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ট্রেড লাইসেন্স দিতে পারবো। এতে ব্যবসাও বৈধ হবে আবার রাজস্ব ও আয় হবে।’