অবশেষে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য পাচ্ছে বিশ্ব

যুদ্ধময় পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ যাচ্ছে অন্য দেশে। এই বার্তা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে খাদ্য সংকটে থাকা বিশ্বের অনেক দেশকে।

স্থানীয় সময় সোমবার (১ আগস্ট) ইউক্রেনের খাদ্যশস্য নিয়ে একটি জাহাজ দেশটির ওডেসা বন্দর ছেড়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।

তুর্কিয়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিয়েরা লিওনের পতাকাবাহী রজনী জাহাজটি লেবানন যাচ্ছে।

জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছ, ইউক্রেন থেকে ২৬ হাজার টনের বেশি ভুট্টা নিয়ে বন্দর ছেড়েছে ওই জাহাজটি।

সুরক্ষিত জাহাজ ট্র্যাকারে সোমবার সকালে একটি টাগ বোটের পাশাপাশি রজনী জাহাজটিকে ওডেসা বন্দর থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।

তুর্কিয়ের মন্ত্রণালয় বলছে, আগামীকাল মঙ্গলবার জাহাজটি ইস্তাম্বুলে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে পর্যবেক্ষণের পর বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

এর আগে গত শনিবার কর্তৃপক্ষ জানায়, খাদ্যশস্য বোঝাই ১৬টি জাহাজ ওডেসা বন্দর ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে রুশ হামলার ভয় এসব জাহাজের যাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

আল জাজিরার তথ্যানুযায়ী, রুশ বাহিনীর আচমকা হামলা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে অপেক্ষায় থাকা জাহাজগুলোর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে যাত্রা করার কথা।

রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায় ইউক্রেন থেকে গমসহ খাদ্যপণ্য রপ্তানি। এতে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে অনেক দেশ। তবে এ মাসে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট সমাধানে প্রতীক্ষিত এক চুক্তিতে পৌঁছায় রাশিয়া ও ইউক্রেন। ওই চুক্তির আওতায় কৃষ্ণ সাগরে অবরোধ শিথিল করেছে রাশিয়া। এতে ইউক্রেন থেকে জাহাজে করে খাদ্য রপ্তানির পথে আর কোনো বাধা নেই।

অবশ্য চুক্তিতে এসব কথা থাকলেও বাস্তবে যুদ্ধময় পরিস্থিতিতে আগের মতোই ভয়াবহতা আচ্ছন্ন করে আছে ইউক্রেনকে। এরই মধ্যে কারাগারে যুদ্ধবন্দিদের হত্যা নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন সংকট।

গত ২২ জুলাই জাতিংঘের তত্ত্বাবধানে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শস্যপণ্য রপ্তানি নিয়ে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সবমিলিয়ে ২৫ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য পাঠানো হবে ইউক্রেন থেকে। এসব খাদ্যশস্য যাবে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জাহাজগুলোর জন্য নিরাপদ চ্যানেল নির্ধারণ করা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার ওডেসার চেরনোমর্স্ক বন্দর পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। খাদ্যশস্য বহনের দায়িত্বে থাকা নাবিকদের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।

তবে প্রেসিডেন্ট আশ্বস্ত করার পরও অনিশ্চয়তায় বন্দর ছাড়ছিল না জাহাজগুলো। পানিতে হামলার সম্ভাবনা এবং নাবিকরা আহত ও নিহত হতে পারেন, এমন শঙ্কা এখনও কাটেনি।

পাঁচ মাস আগে যুদ্ধ শুরুর পর পরই ইউক্রেন উপকূলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়া নৌ অবরোধ দিলে মুখ থুবড়ে পড়ে ইউক্রেনের রপ্তানি।
খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে দু দেশের হওয়া চুক্তিটি ১২০ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে। চুক্তির মেয়াদ আরও আলোচনা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তে পারে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।

ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।

যুদ্ধে বহু মানুষ হয়েছে বাস্তুচ্যুত। হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এরই মধ্যে কয়েক দফা যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে চুক্তি হলেও কার্যত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এখনও।