অন্যের ভালো না চাওয়াই মিডিয়ার চরিত্র : সিলেটে মোমেন

অন্যের ভালো না চাওয়াই হচ্ছে কিছু মানুষ ও মিডিয়ার চরিত্র- এমন মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে সিলেট সদর উপজেলার চাঁনপুর এলাকায় সুরমা নদীর খনন কাজের উদ্বোধন শেষে কূটনীতিক মো. তৌহিদুল ইসলাম প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এমনকি তৌহিদুল ইসলামকে অস্ট্রিয়ায় রাষ্ট্রদূত নিয়োগের প্রস্তাব নাকচ করার পেছনে মন্ত্রণালয়ের সহকর্মীরা জড়িত থাকলেও তাঁর পক্ষ অবলম্বন করেই যাবেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কিছু মানুষ ও মিডিয়ার চরিত্রের দিকে ইঙ্গিত করে ড. মোমেন বলেন, উপরে ওঠানোর চেষ্টা কেউ করেন না, শুধু নামানোর চেষ্টা করেন।

মন্ত্রী বলেন, তৌহিদুল ইসলাম ভেরি গুড অফিসার এবং তুখোড় ছেলে। বর্তমানে সে আমাদের অ্যাম্বাসেডর ইন সিঙ্গাপুর। তাকে আমরা ভিয়েনাতে দিতে চাই। সেখানে যেয়ে মাল্টিন্যাচারাল কাজ আছে বলে আমাদের ধারণা।

তিনি বলেন, কূটনীতিক মো. তৌহিদুল ইসলামকে অস্ট্রিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব নাকচ করার পেছনে মন্ত্রণালয়ের সহকর্মীরা জড়িত। তবে আমি তার পক্ষ অবলম্বন করে যাবো।

ড. মোমেন বলেন, সে যখন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পরীক্ষা দেয়, তখন সারা বাংলাদেশের মধ্যে সে প্রথম হয়। তারপরে সে তার ব্যাচের ফার্স্টবয় ছিল। অত্যন্ত ভালো, তুখোড় ছেলে। এখন ওরে টেনে কিভাবে নামানো যায়, তার জন্য তার মন্ত্রণালয়ের লোকজন, তারই বন্ধুবান্ধবরা কন্টিনিউয়াসলি….।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ চারটা বড় বড়, ইউএনওতে চারটা বড় রিকগনিশন নেয়। একটা হচ্ছে শান্তি ও সংস্কৃতি। আর দুটো বড়, একটা হচ্ছে অটিজমের ওপর একটি এবং আরেকটি হচ্ছে মানুষের ক্ষমতায়ন। এই দুটোতে এই ছেলে (তৌহিদুল) প্রথম কাউন্সিলর ছিল ইউএনওতে এবং সে অসম্ভব তুখোড় ছেলে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিন্তু তার শত্রু আছে। সে যখন মিলানে কনসাল জেনারেল ছিল, কনসাল জেনারেল থাকা অবস্থায় কোনো একটা মেয়েকে তার পেছনে লাগিয়ে দেয়। লাগিয়ে দিয়ে একটা কেলেঙ্কারির চেষ্টা করে। তখন তাকে উহ্য করা হয়, সাসপেন্ড করা হয়, অনেক ইনভেস্টিগেশন করা হয়, সরকারের অনেক টাকা, আপনাদের টাকা খরচ করা হয়। পরে দেখা যায় একেবারে বানোয়াট। তারপর তার প্রমোশন হয়, তারপর অ্যাম্বাসেডর হয়। এখন তার বিরুদ্ধে আবার লাগছে একদল, তারই বন্ধুবান্ধব হবে। আর না হয় পত্রিকায় এগুলো গেল কিভাবে? হি ইজ অ্যা ভেরি গুড অফিসার। আমি যদ্দিন আছি, আই উইল ডিফেন্ড হিম।

এর আগে মন্ত্রী ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সুরমা নদীর খনন কাজের উদ্বোধন করেন। এসময় প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানুষের দুর্গতি নিরসনে সুরমা নদী খনন শুরু হয়েছে। বন্যার প্লাবন ও নদীভাঙন রোধে এ পরিকল্পনা কাজে আসবে বলে আমি আশা করি।

এছাড়া সুরমা নদীর খনন কাজ বন্যা মোকাবেলা ও ভাঙন রোধে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. আব্দুল মোমেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা যায়, সিলেট নগরীর কুশিঘাট থেকে লামাকাজি সেতু পর্যন্ত প্রথম দফায় প্রায় ১৮ কিলোমিটার নদী খনন করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। নদী খনন করছে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সিলেট নগরবাসীকে বন্যামুক্ত করা ও সুরমা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে শুরু হয়েছে খনন কাজ। শীত মৌসুমে সুরমা নদী শুকিয়ে নালায় পরিণত হয়। বর্ষায় নদীর তীর উপচে পানি ঢুকে সিলেট নগরীতে। এতে পানিতে তলিয়ে যায় সিলেট শহর। গত বছর দুই দফা বন্যায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সিলেট নগরবাসীকে।

পাউবো সিলেট অফিস সূত্র জানায়, গত বছর মে ও জুন মাসে নগরীতে ভয়াবহ বন্যা হয়। ওই সময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সুরমা নদী খনন, শহররক্ষা বাঁধ এবং নদী ও ছড়া-খালের উৎসমুখে ¯¬ুইস গেট নির্মাণের দাবি উঠে। ওই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এ নদী খননের উপর জোর দেন। এই প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুরমা খননে প্রকল্প গ্রহণ করে। অবশেষে নগরবাসীর পরিত্রাণে জরুরী ভিত্তিতে সুরমা খননের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান, প্রথম দফার খনন শেষ হলে কুশিঘাট থেকে লামাকাজি সেতু পর্যন্ত সুরমার নাব্যতা বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে পানি প্রবাহ। এতে বর্ষায় সিলেট মহানগরে বন্যার আশঙ্কা কমবে। আগামী জুন মাসের মধ্যেই খনন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার বিকেলে সিলেট নগরীর জল্লারপাড়ে নারী উদ্যোক্তা মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন মন্ত্রী। এসময় মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করেছিলেন বলেই আমরা ঘরে বসে ই-কমার্সের মাধ্যমে সব রকমের পণ্য কিনতে পারছি। এমনকি কোরবানির ঈদে গরুও অনলাইনে বিক্রি হয়েছে প্রচুর। এবং কম খরচে অনলাইনে কুরবানির পশু ক্রয় করা গেছে। আর ই-কমার্সে পণ্য বিক্রেতাদের একটি বড় অংশ নারী। করোনাকালীন সময়ে ঘরে বসে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেছেন নারীরা। ই-কমার্সে ‘উই-ই’ নামে নারীদের প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সেখানে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার সদস্য রয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সিলেটের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা করে দেওয়া দরকার। যেখানে তারা বছরের বিভিন্ন সময় তাদের তৈরিকৃত পণ্য প্রদর্শন এবং বিক্রি করতে পারেন। এটি একটি উত্তম প্রস্তাব। এর দ্বারা এখানে আরও নারী উদ্যোক্তা তৈরি হবেন এবং নারীরা ব্যবসায় উৎসাহ পাবেন। আমরা সেই জায়গার ব্যবস্থা করবো। এসময় সিলেটের কৃতিসন্তান ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এনামুল হাবিব এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) কাউন্সিলর মো. আজাদুর রহমান আজাদসহ সংশ্লিষ্টরা।