অনিয়ম-দুর্নীতিতে হাবুডুবু, কোন পথে যাচ্ছে সিলেটের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

ভাইস চ্যান্সেলরদের (ভিসি) অনিয়ম-দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে সিলেটের প্রথম সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২ সালের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম ভিসি ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীর অধ্যায় শেষ হলেও এখনও সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি চিকিৎসাশাস্ত্রের এই প্রতিষ্ঠানটি।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন দ্বিতীয় ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রায় দুই বছর হলেও একই সংকটে ঘুর্ণি খাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

বর্তমান এই ভিসি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চক্ষু চিকিৎসক ছিলেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনিও রয়েছেন আত্মগোপনে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও একদিনও অফিস করেননি ভিসি। শত চেষ্টার পরেও তাঁকে খুঁজে পাচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে তাদের মধ্যে আরও ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।

এদিকে, প্রায় ২২ মাস ধরে বেতন ভাতা-পাচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এ অবস্থায় প্রতিনিয়ত বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্নভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা। তবুও কোনো সুরাহা মিলছে না।

২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে নাম পাল্টে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি ডা. মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী ও রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নঈমুল ইসলাম চৌধুরী নিয়োগ বাণিজ্যসহ ব্যাপক জালিয়াতি করেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মেয়াদ শেষ হলে প্রথমে চাকরি হারান রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নঈমুল হক চৌধুরী। এরপর একই পথে যেতে হয় ভিসি ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকেও।

প্রথম ভিসির মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালের শুরুতেই দ্বিতীয় ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। ডা. এনায়েত হোসেন যোগ দেওয়ার আগেই আগের উপাচার্যের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা স্থগিত করার নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়।

নিয়োগের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দূর করার আশ্বাস দেন ভিসি ডা. এনায়েত। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় দুই বছর হলেও এসবের কোনো কিছুই করেননি তিনি। উল্টো কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্য থেকে নিজের পছন্দমতো বিভিন্ন পদে নতুন করে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেন ভিসি এনায়েত। আগের ভিসির মতো তাঁর বিরুদ্ধেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

এসব বিষয় ও বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন চলাকালেই গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর পর থেকে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ তিনজনই লাপাত্তা। গত মাসে পদত্যাগ করেছেন রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মো. ফজলুর রহমান। তার বিরুদ্ধেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে।

অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর থেকে আর ক্যাম্পাসে আসেননি ভিসি ডা. এনায়েত। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, যোগদানের পর থেকেই সপ্তাহে মাত্র দুইদিন অফিস করতেন ভিসি। বাকি সময় ঢাকায় বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন। সিলেটে একটি চেম্বারেও তিনি রোগী দেখেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুস সামাদ চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক বলতে কেউ নেই। ভিসি, রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ তিনজনই লাপাত্তা। এখন আমরাই বিশ্ববিদ্যালয় পাহাড়া দিচ্ছি। তিনি বলেন, শুনেছি রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান পদত্যাগ করেছেন। নতুন কেউ দায়িত্বে আসছেন কী না তা জানা নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, মূলত এই প্রতিষ্ঠানের মা-বাপ বলতে কেউই নেই। আমরা ২২ মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। কাকে বলবো সেটাও বুঝতে পারছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও আমরা দাপ্তরিক কাজ নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছি। তবুও আশায় দিনাতিপাত করছি।’

এ বিষয়ে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. এনায়েত হোসেনের বক্তব্য নিতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাঁড়া দেননি।