অনলাইন জুয়ায় আসক্ত তরুণরা, পাচার হাজার কোটি টাকা

প্রতিকী ছবি

ইন্টারনেটের এই যুগে বিপিএল, আইপিএল, টি-টোয়েন্টি ও ফিফা বিশ্বকাপসহ সব খেলা সম্প্রচারের সময় জনপ্রিয় সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয় অনলাইন ভিত্তিক নানা জুয়া ও বেটিং বিজ্ঞাপন। ফলে সহজেই প্রলোভনে পা রাখে দেশের লাখো যুবক। আর এতেই ধ্বংস ডেকে আনে তারা। এরপর সবকিছু হারিয়ে একপর্যায়ে নিঃস্ব হওয়াই যেন তরুণদের নিত্যদিনের ঘটনা। অনলাইন ভিত্তিক এসব জুয়া ও বেটিং সাইটের মাধ্যমে ই-মানি হয়ে প্রতি বছর বিদেশে পাচার হচ্ছে হাজার কোটি টাকারও বেশি।

ওয়ান এক্সবেট, বেটইউনার, বেট-৩৬৫, ক্রিকেক্স, এক্সবেট, মাইজেট ও মোস্টবেটসহ ১৮৬টি অ্যাপ ও লিংক রয়েছে যেখানে তরুণরা জুয়া খেলে বিপুল অর্থ পাচার করছে।

সূত্র বলছে, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পরিচালিত হয় জুয়ার এসব অনলাইন ভিত্তিক পোর্টাল। দেশগুলোতে তাদের নিজস্ব ডিলার বা প্রতিনিধিও রয়েছে। মূলত তারাই মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের কাছ থেকে জমা হওয়া টাকা সংগ্রহ করে। তারপর সেই টাকা অনলাইনভিত্তিক ‘বাইন্যান্স’ নামক অ্যাপে বিনিয়োগ করে। আর এভাবেই তারা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ফলে দেশীয় অর্থনীতি দিন-দিন নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, ‘দেশের অন্তত ৫০ লাখ মানুষ এই অনলাইন জুয়ায় জড়িত রয়েছে। সিআইডি’র তথ্যমতে যার সংখ্যা ২০ লাখ। তারা প্রতনিয়ত মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে মাসে ১৫০ কোটি টাকার বেশি অবৈধভাবে লেনদেন করে দেশের অর্থনীতি পাচার করছে’।

এগুলো শেয়ারবাজারের মতো একটি অনলাইন অ্যাপ। যেখানে ডিলাররা টাকাকে ডলারে রূপান্তর করে। এরপর ডলারকে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিট কয়েনে রূপান্তরিত করে জুয়ার সাইট মালিকের কাছে পৌঁছে দেয়। এভাবেই কূটনৈতিক উপায়ে পাচার হচ্ছে দেশের বিশাল পরিমাণত অর্থ। বিট কয়েন ছাড়া হুন্ডির মাধ্যমেও এসব টাকা পাচার হয়ে থাকে। এজন্য তাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকরা। বিভিন্ন প্রলোভন আর লোভ দেখিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে এজেন্ট গড়ে তুলেছে সেখানকার মাফিয়ারা। জেনে না জেনে প্রবাসী শ্রমিকরাও জড়িয়ে পড়ছেন তাদের পাতানো ফাঁদে।

মূলত, এসব সাইটে এমনভাবে লগারিদম করা থাকে যে, একজন জুয়াড়ি যদি ১০ বার খেলার জন্য টাকা বিনিয়োগ করেন তবে তিনি অন্তত ৬থেকে ৮বার জয়ী হবেন। এতে জুয়াড়ির আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যায়। ফলে একবার দু’বার হারলেও পরের বার খেলতে সে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে। কিন্তু তখন আর লাভের মুখ দেখা হয় না তার। পূর্বের বিনিয়োগে লোকসানের টাকা তুলতে গিয়ে উল্টো বিনিয়োগ করতে করতে সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তারা।