অনন্ত বিজয় স্মরণ : স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি

বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার স্থানে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তার সহযোদ্ধারা।

শুক্রবার (১২ মে) অনন্ত হত্যার ৮ বছর পূর্তিতে আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠানে এমন দাবি জানানো হয়।

আট বছর আগে, ২০১৫ সালের ১২ মে নগরের সুবিদবাজার এলাকার দস্তিদার দিঘির পাড়ে অনন্ত বিজয় দাশকে কুপিয়ে হত্যা করে উগ্রবাদী গোষ্ঠি। অনন্ত হত্যার পর প্রয়াত যুবনেতা মঈনুদ্দিন খান জালালের উদ্যোগে এই স্থানে একটি অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।

প্রতিবছরই অনন্ত হত্যার দিনে, এই অস্থায়ী স্মসৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও এই স্থানে স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

শুক্রবার দুপুরে স্মরণ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অনন্ত বিজয় হত্যার পর থেকেই এই স্থায়ে একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানানো হচ্ছে। সিটি করপোরেশন থেকে বারবার এ ব্যাপারে আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা দ্রুত অনন্ত স্মরণে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান।

গণজাগরণ মঞ্চ, সিলেটের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবুর সঞ্চালনায় এতে বক্তারা আরো বলেন, অনন্ত বিজয় হত্যার রায় প্রদান করা হলেও রায়ে সন্দেহভাজন একজনকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। এই রায়ে অসন্তোষের কথা জানিয়েছে তার পরিবার। তাই আমরা রাষ্ট্রের কাছে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার দাবি জানাই। একইসঙ্গহে রায় দ্রুত কার্যকরেরও দাবি জানাচ্ছি।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, অনন্ত বিজয়ের ভগ্নিপতি সমর বিজয় সী শেখর, পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল করিম কিম ও তোফাজ্জল সোহেল, অনন্তর মামলার আইনজীবী মনির উদ্দিন আহমদ, যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিউর রহমান, সংস্কৃতি কর্মী রিপন চৌধুরী, বাসদ নেতা প্রণব জ্যোতি পাল, সাম্যবাদী আন্দোলনের নিরঞ্জন সরকার অপু, অনন্ত বিজয়ের বন্ধু আবুল কাশেম, নাট্যকর্মী অরুপ বাউল, উজ্জ্বল চক্রবর্তী, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক রাজীব রাসেল, দেবজ্যোতি দাস দেবু, শহিদুজ্জামান পাপলু, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান প্রান্ত, সাবেক সভাপতি সপ্ত দাস, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সিলেটের সাধারণ সম্পাদক তানজিনা বেগম প্রমুখ।

আলোচনা পর্ব শেষে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে অনন্তের অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পন করে- গণজাগরণ মঞ্চ সিলেট, জালাল অন্তর, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, নগরনাট প্রমুখ।

পরে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের পক্ষ থেকেও পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। এসময় নাট্য পরিষদের পরিচালক অনুপ কুমার দেব, সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত, সহ-সভাপতি সুপ্রিয় দেব শান্ত, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ, সাবেক সভাপতি নিরঞ্জন দে, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল বাসিত শেরো, আব্দুল কাইয়ুম মুকুল, সাবেক সহ-সভাপতি খোয়াজ রহিম সবুজ, জ্যোষ্ঠ নাট্যকর্মী নিলাঞ্জন দাশ টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট শহরের সুবিদবাজারে নিজ বাসার সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা হয় এই মুক্তমনা লেখককে।

গত বছরের ৩০ মার্চ সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল সিলেটের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার রায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একজনকে খালাস দেন।

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), উপজেলার খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫) ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫)। এছাড়া বিতর্কিত ব্লগার সাফিউর রহমান ফারাবীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আবুল খায়ের রশীদ আহমদ ছাড়া অপর তিন মৃত্যুদণ্ডাপ্রাপ্ত আসামি পলাতক।