‘জামদানী এক অমূল্য সম্পদই যেন। শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় অসামান্য কারুকাজ খচিত সে জিনিস, যার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছিল পুরো বিশ্বই। সেই মোঘল আমল থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের রাণী, কে না তারিফ করেছে এর নান্দনিকতার! নাম তার জামদানি শাড়ি।’
স্বপ্নীলা চৌধুরী। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষে এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসাবে দায়িত্বরত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়েছেন একদমই শখের বশে, ২০১৭ সালে ছাত্রী থাকা অবস্থায়। তখন নিজের ডিজাইন করা কুর্তি, ওড়না এসব নিয়ে কাজ করতেন।
বাঙালীর ঐতিহ্যের স্মারক জামদানী নিয়ে কাজ করছেন সম্প্রতি কয়েক মাস হল। বিভিন্ন উৎসবে জামদানি কিনতে গিয়ে দেখলেন, সিলেটে ভাল জামদানির সরবরাহকারী নেই। তাছাড়া সিলেটে জামদানির চলও তুলনামূলকভাবে কম। অথচ এই জামদানি একে তো আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই পণ্য) এবং এটা ইউনেস্কো দ্বারা স্বীকৃত অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বা ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ। পাশাপাশি এই জামদানি শাড়ি বোনা শত শত দরিদ্র তাঁতীদের আয়ের একমাত্র উৎস।
তিনি যখন জামদানি সংগ্রহ করতে নারায়ণগঞ্জ যান- তখন হত-দরিদ্র তাঁতিদের আর্থিক দৈন্যদশা দেখে অনুভব করেন যে, “তাদের অবস্থার উন্নতি তখনই হবে যখন আমরা বেশি করে জামদানি কিনবো, পরবো।আরেকটা ব্যাপার, হাত দিয়ে জামদানি বোনা খুব কঠিন কাজ। দুইজন তাঁতী মিলে ঘন্টার পর ঘন্টা মাটিতে কাটা তাঁতে বসে এই কাজটা করে।জামদানির দাম নিয়ে অনেকসময় মানুষের অভিযোগ থাকে৷ কিন্তু তাঁতীদের জামদানি বোনার কাজটা সামনাসামনি দেখলে হয়তো আমাদের মনে হতো যে এই কষ্টের কাছে এই কয়েক হাজার টাকা কিছুই না।”
মূলত দেশীয় ঐতিহ্যের প্রসারের জন্যই জামদানি নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন সিলেটের এই নারী উদ্যোক্তা।
আগ্রহের এই কাজকে তিনি ব্যবসা বলতে নারাজ। কারণ এটা থেকে তার লাভের সম্ভাবনা সীমিত। কিন্তু তার আনন্দ এই জায়গায় যে নিজের দেশের কিছু মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছেন এবং তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী দামে এই জামদানিগুলো ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে চেষ্টা করছেন।
তার উদ্দেশ্য একটাই, প্রত্যেকে একটা হলেও জামদানি যদি কেনেন, তাহলে সেটা থেকে একজন তাঁতী উপকৃত হবে। নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য হয়তো এই উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তেমন নেই কিন্তু এটা আমাদের দেশের দরিদ্র তাঁতীদের টিকে থাকার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।