হাত বদলে বিএনপি নেতাদের শেল্টারে চলছে সিলেটের অবৈধ স্ট্যান্ড

সিলেট সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাতগুলো দখল করে প্রায় শতাধিক কার-মাইক্রোবাস, সিএনজি-অটোরিকশা, পিকআপ, লেগুনার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এসব স্ট্যান্ডের বৈধ অনুমোদন না থাকলেও সংশিষ্টদের ম্যানেজ করেই স্ট্যান্ডগুলো বছরের পর বছর  চলছে। ফলে সড়কগুলোতে সব সময় লেগেই থাকে যানজট। আর এই যানজট এখন নগরবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সময়ে এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের বিরুদ্ধে নানা প্রদক্ষেপ নেয়া হলেও রাজনৈতিক কারণে সেগুলো কখনও আলোর মুখ দেখেনি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দলীয় নেতাকর্মীরা এসব অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং নিয়ন্ত্রণ করার ফলে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অবৈধ স্ট্যান্ড সরাতে তেমন কোন আগ্রহ ছিল না। সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মেয়াদকালে জনস্বার্থে নগরের কয়েকটি পয়েন্টে স্বল্প সময়ের জন্য ৫ থেকে ৬টি সিএনজি অটোরিকশা রাখার মৌখিক অনুমতি দেয়া হয়েছিল। শর্ত ছিল, গাড়িতে যাত্রী উঠিয়ে দ্রুত রাস্তা ফাঁকা রাখবে। কিন্তু কখনোই এসব শর্ত মানা হয়নি।

সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ কোর্ট পয়েন্ট, কুদরত উল্লাহ পয়েন্ট, শেখঘাট পয়েন্ট, সোবহানীঘাট, মেন্দিভাগ, উপশহর, ধোপাদীঘিরপাড়, নয়াসড়ক, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, মেজরটিলা, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট, রিকাবীবাজার, মজুমদারী, ওসমানী হাসপাতালের সামনে, মদিনা মার্কেট, বাগবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়কগুলোও দখল করে সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়ও অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে ওঠেছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পিকআপ, লেগুনা ও মাইক্রো বা কারের স্ট্যান্ড রয়েছে। দিনদিন যেটি বেড়েই চলছে।

এনিয়ে আম্বরখানা পয়েন্টে থাকা কয়েকজন অটোরিকশা চালকের সাথে কথা বললে তারা জানান , নির্ধারিত স্থান না থাকায় সড়কের পাশেই তাদের গাড়ি রেখে যাত্রী ওঠানামা করতে হয়। সড়কের পাশে গাড়ি রাখতে ঝামেলা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশকে প্রতি মাসে গাড়ি নির্ধারিত টাকাও দেওয়া হয়। এসময় তারা জানান, একটা সময় আ.লীগ নেতারা তাদের নিয়ন্ত্রণ করত ,এখন করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

নগরীর আম্বরখানা জালালাবাদ এলাকার বাসিন্দা হুমায়ূন আহমেদ চৌধুরী নামে এক পথচারী জানান, নগরীর মোড়ে মোড়ে অবৈধ মাইক্রবাস ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে কিছু রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশনের অসাধু ব্যক্তির পকেটে যায় চাঁদার টাকা। তাদের কারণেই এর সমাধান হচ্ছে না। আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।

ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুখ্যানে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা-কর্মী আত্মগোপনে আছেন। অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আর এই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছেন বিএনপির কিছু নেতাকর্মী। সূত্র জানায়, আ.লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিলেটের অবৈধ স্ট্যান্ড চলে এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের শেল্টারে।

সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম রোববার (১৭ নভেম্বর)  ‘সিলেট ভয়েসকে’ বলেন, অবৈধ স্যান্ডের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান সবসময়ই চলে। আমরা অভিযান শেষ করে আসার পর তারা আবারও জায়গায় চলে আসে। যেকারণে এটি নিরসন করা যাচ্ছে না। সামনে অবৈধ স্যান্ডের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

‘বিএনপি নেতাকর্মীদের শেল্টারে অবৈধ কোন স্যান্ড চলছে এরকম কোন অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমি পাইনি জানিয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী (১৭ নভেম্বর)  ‘সিলেট ভয়েসকে’ বলেন, বিএনপি এসব বিষয়ে বরাবরের মতোই কঠোর ,যদি এরকম কোন অভিযোগ কারো বিরুদ্ধে পাওয়া যায় আর প্রমাণিত হয়, আমরা তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব ‘