অবশেষে হকারমুক্ত হওয়ার পথে সিলেট নগরী। শুরু হলো নগরবাসীর বহুল প্রতিক্ষিত ভ্রাম্যমাণ হকার পুনবার্সন কার্যক্রম। রোববার (১০ মার্চ) সকালে নগরীর লালদিঘী মাঠে হকার পুনর্বাসন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। পর্যায়ক্রমে সকল হকারকে লালদিঘী মাঠে নিয়ে আসার পাশাপাশি তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা পুরনের আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে হকার নেতারা মেয়রের ডাকে সাড়া দিয়ে লালদিঘী মাঠে আসলেও এখানে তাদের ধরে রাখাটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা।
গেল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল স্মার্ট সিটি গঠন ও নগরীর জঞ্জাল হিসেবে পরিচিত হকার পুনর্বাসন। সেই প্রতিশ্রুত হকার পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে স্মার্ট সিটির পথে আরও একধাপ এগোলো সিলেট নগর।
সকালে নগরভবন লাগোয়া লালদিঘির পাড়ের মাঠে অস্থায়ী মার্কেটে পুনবার্সন কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ছোট ছোট ব্যবসা করে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করেন। তারা চুরি-ডাকাতি করেন না। এজন্য তাদেরকে সম্মানের চোখে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, হকাররা শুধু হকার না, তারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, তারা আমাদের ভাই, আমাদের পরিজন তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ক্রেতাদের সাথে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে তাদের মন জয় করতে হবে, তবেই এখানে ক্রেতারা আসবে। ক্রেতারা আসলে ব্যবসা ভালো হবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে পারবেন।’ তিনি এই মার্কেটের প্রচার সহ যতো ধরণের সহযোগিতা প্রয়োজন সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে করার ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, আমি এই মাটির সন্তান, এই শহরের আলো-বাতাসে আমি বেড়ে উঠেছি। বিগত নির্বাচনে আপনারা আমাকে যে ভালোবাসা দেখিছেন তার ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না। মেয়র বলেন, আমি নির্বাচনের সময় হকার সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আজ তার বাস্তাবায়ন করতে যাচ্ছি। পর্যাক্রমে নগরবাসীর বাকী সমস্যারও সমাধান করা হবে। এজন্য তিনি নগরবাসীর অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমদ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান, কাউন্সিলর শান্তুনু দত্ত শন্তু, আব্দুল মুহিত জাবেদ, কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন আব্দুর রকিব।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, তোফায়েল আহমদ শেপুল, ফজলে রাব্বি মাসুম, জয়নাল আবেদীন, রুহেনা আক্তার মুক্তা, আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাউর রহমান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম শামীম, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বিজয় কুমার দেব ভুলুসহ নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠান শেষে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মার্কেট পরিদর্শন এবং কয়েকটি দোকান থেকে কিছু কেনাকাটা করেন। এছাড়াও এসময় বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেনও মার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা করেছেন।
এর আগে ২০১২ সালে সিলেট নগরীর লালদিঘীর পাড়ে সিসিকের মালিকানাধীন জরাজীর্ণ মার্কেট ভেঙে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলেও টেকেনি বেশিদিন। ২০২১ সালে লটারির মাধ্যমে সহস্রাধিক হকারকে পুনরায় পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন তৎকালীন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। মাস-দুয়েকের মাথায় ব্যর্থ হন তিনিও।
সর্বশেষ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল স্মার্ট সিটি গঠন ও হকার পুনর্বাসন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে হাটছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
মেয়রের ডাকে সাড়া দিয়ে লালদিঘী মাঠে আসলেও রয়েছে কিছু সমস্যাও। এমন বাস্তবতায় লটারির মাধ্যমে সমতার ভিত্তিতে যাতে জায়গা বন্টন হয়, এমন দাবি দরিদ্র হকারদের।
এদিকে, পুনর্বাসিত নতুন জায়গায় হকারকের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিলেন নগরপিতা। মেয়রের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও নতুন জায়গায় হকারদের ধরে রাখাটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সফল হবেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান, এমন প্রত্যাশা সাধারণ জনগণের।