স্কুল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সারাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ৩২ লাখ ১৮ হাজার হিসাব খোলা হয়েছে। বলা যেতে পারে, শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে রীতিমত বিপ্লব ঘটেছে। গত তিন মাসের ব্যবধানে হিসাব বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হিসাব ছিল ৩১ লাখের বেশি। জুন পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ৫১ শতাংশ হিসাব খোলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের হিসাবে সঞ্চয় করেছে ২ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, সর্বোচ্চ হিসাব খোলা হয়েছে ঢাকা বিভাগে, ৮ লাখ ১১ হাজার; যা মোট ব্যাংক হিসাবের ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ এবং মোট সঞ্চয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ। ডাচ বাংলা ব্যাংকে সর্বোচ্চ হিসাব খোলা হয়েছে প্রায় ৬ লাখ। এসব ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয় জমা হয়েছে ৬১০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্যোগ নেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শিশুদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুলতে ২০১০ সালের ২ নভেম্বর স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এক যুগে ৩২ লাখ ১৮ হাজার ১৯৩টি ব্যাংক হিসাব খুলে স্কুল শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে তারা ব্যাংকে জমা করেছে ২ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকার বেশি। ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে সারা দেশে ৫৫টি ব্যাংকে এসব হিসাব খোলা হয়েছে। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এক বছরে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে স্কুল ব্যাংকিং। গত বছরের মার্চ থেকে ব্যাংক হিসাব খোলার হার বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। আর চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুনে বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে এগিয়ে বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাংক হিসাব খুলেছে প্রায় ৫৩ শতাংশ। এর বিপরীতে ছেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হিসাব খুলেছে ৪৭ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ হিসাব খোলা হয়েছে ৮ লাখ ১১ হাজার, যা মোট হিসাবের ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ। এসব ব্যাংক হিসাবে মোট সঞ্চয় জমা হয়েছে ১ হাজার ২৪ কোটি টাকা বা প্রায় ৪৪ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ বা ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ। এসব হিসাব নম্বরে সঞ্চয় জমা হয়েছে ৫৩৪ কোটি টাকা বা ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে প্রায় ৪ লাখ ৪২ হাজার হিসাব নম্বরে সঞ্চয় জমা হয়েছে ১৯৫ কোটি টাকা।
বাংলাদশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব সবচেয়ে এগিয়ে বেসরকারি ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে খোলা হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ হিসাব নম্বর। এগুলোতে সঞ্চয়ও বেড়েছে ৭৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। এর বিপরীতে নয়টি বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে সাতটিতে ১ শতাংশ হিসাবও খোলা হয়নি।
স্কুল ব্যাংকিংয়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংকের স্থান হচ্ছে ৫৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।এরমধ্যে শীর্ষে রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংক। এই ব্যাংকে হিসাব খোলার সংখ্যা হচ্ছে ৫ লাখ ৯৪ হাজার। এরপরের অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের হিসাব খোলা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার, অগ্রণী ব্যাংকে ২ লাখ ৭৪ হাজার, ব্যাংক এশিয়ার ২ লাখ ১৭ হাজার এবং রুপালী ব্যাংকে হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার।
স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ৬ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের মা-বাবা অথবা বৈধ অভিভাবকের সঙ্গে যৌথ নামে হিসাব খুলতে পারে। কোনো সার্ভিস চার্জ ছাড়াই ১০০ টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলার এই সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মহামারির অভিঘাতে অনেক পরিবারের উপার্জন কমে যাওয়ায় স্কুল ব্যাংকিংয়ে এর বড় প্রভাব পড়েছে। যে কারণে শহরের স্কুলে ব্যাংকিং কমলেও গ্রামে বেড়েছে।
উল্লেখ্য, স্কুলের শিক্ষার্থীদের আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা ও প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করতে স্কুল ব্যাংকিং সেবা চালু হওয়ার পর থেকেই স্কুলপড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আরও জানান, স্কুলব্যাংকিং আরও জনপ্রিয় করতে বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে; যাতে আরও প্রচারের মাধ্যমে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত করা যায়। স্কুল ব্যাংকিং বাড়লে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করা সম্ভব। কারণ শিক্ষার্থীরা এই ব্যাংকে জমা করা অর্থ পরে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারবে।
সূত্র : ঢাকাপ্রকাশ