তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আদতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে সৌদি আরব। অথচ এই দেশটিকে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে মনে করা হতো। নতুন বাস্তবতায় সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন বাইডেন প্রশাসন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
গত ৫ অক্টোবর তেল উৎপাদন কমানোর বিষয়ে একমত হয় সৌদি আরব ও রাশিয়াসহ ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমাবে এই জোটের সদস্য দেশগুলো। এই ঘোষণার পরই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। এরইমধ্যে দাম বেড়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় বাইডেন প্রশাসন। রিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর নতুন পদক্ষেপ বিবেচনার বিষয়টিও সামনে আসে।
পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার ইতি টানতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরইমধ্যে এমন ইঙ্গিত মিলেছে।
নিরাপত্তা ইস্যুতেও রিয়াদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা উঠতে শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি বিশ্বাস করেন যে, সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করা উচিত। সেই সম্পর্কটি কোথায় থাকা দরকার এবং এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করছে কিনা তা দেখতে হবে।’
সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের এই পদক্ষেপটি ‘ওপেক এবং সৌদি নেতৃত্বের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের আলোকে’ এসেছে বলেও জানান জন কিরবি।
যুক্তরাষ্ট্রে এরইমধ্যে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বন্ধের জোরালো দাবি উঠেছে। মার্কিন সিনেটের ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন বব মেনেন্দেজ। তিনি বলেছেন, তেলের উৎপাদন কমিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে পরোক্ষভাবে রাশিয়াকে সহায়তা করছে রিয়াদ। এ ঘটনায় রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতা বন্ধের দাবি তুলেছেন প্রভাবশালী এই ডেমোক্র্যাট সিনেটর।
তিনি বলেন, ‘সৌদি সরকার ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন না করা পর্যন্ত আমি রিয়াদের সঙ্গে কোনও সহযোগিতার বিষয়ে সবুজ সংকেত দেবো না। যথেষ্ট হয়েছে।’
জন কিরবি জানিয়েছেন, সৌদি সরকার রুশ স্বার্থকে অধিক প্রধান্য দেওয়ায় যারা রিয়াদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন প্রেসিডেন্ট।
ইউক্রেন যুদ্ধ তথা বিশ্ব অর্থনীতির বাইরেও ওপেক প্লাসের তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণাটি বাইডেন প্রশাসনের জন্য বিব্রতকর। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে এই ঘোষণাটি এসেছে। এখন তেল বাবদ মানুষের খরচ বেড়ে গেলে স্বভাবতই সেটি ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
জন কিরবি বলছেন, আগামী নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর সৌদি নীতি নিয়ে কংগ্রেসে আলাপ আলোচনা শুরু হবে।
সৌদি বিশেষজ্ঞ ব্রুস রিডেল বলেন, আমি মনে করি ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতর থেকে চাপটা অনেক বেশি। প্রশাসনকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। মিডিয়া, নির্বাচনি এলাকা; যা ডেমোক্র্যাটদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তারা সবাই পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলছে।