শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের এক নবীন শিক্ষার্থীকে পরিচয় পর্বের নামে র্যাগ দেয়ার অভিযোগে একই বিভাগের পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বহিষ্কৃতরা হলেন, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. খলিলুর রহমানের অনুসারী মো. আল আমিন, মো. পাপন মিয়া, মো. রিয়াজ হোসেন ও রসায়ন বিভাগের সভাপতি মেহেদী হাসান স্বাধীনের অনুসারী মো. আশিক হোসেন ও ছাত্রলীগ নেতা সুমন মিয়ার অনুসারী মো. আপন মিয়া।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বহিষ্কার আদেশ বলবৎ থাকা অবস্থায় তারা ক্যাম্পাস ও হলে অবস্থান করতে পারবেন না।
সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-গণ যোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মো. ফারহান রুবেল ও রসায়ন বিভাগের সভাপতি মেহেদী হাসান স্বাধীন নিয়ন্ত্রাধীন সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ১১১ নং কক্ষে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের ৯ জন নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ১৬ জন শিক্ষার্থীর পরিচয় পর্ব চলে। এসময় র্যাগিংয়ের শিকার হওয়া এক শিক্ষার্থী গত বুধবার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্তদেরকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে ওই কক্ষে পরিচয় হওয়ার কথা জানতেন না বলে জানিয়েছেন মো. ফারহান ও স্বাধীন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, র্যাগিং এর সময় শাহপরান হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলে থাকা ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সবাইকে ডেকে নিয়ে আসেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আশিক হোসেন। এসময় পরিচয় হওয়ার কথা বলে নানা ভাবে তাদেরকে হেনস্থা করেন সিনিয়ররা। তবে এসময় যারা অধিক র্যাগ দিয়েছেন তাদের নামে অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের শিকার হওয়া রাতকে ‘জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ রাত’ উল্লেখ করে বলেন, ‘সেই রাত ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ রাত। র্যাগিংয়ের শিকার হওয়ার পর বাসায় চলে আসি। এখন ক্যাম্পাসে যেতেও ভয় করতেছে।’
র্যাগিংয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাইয়েরা আামাদের ব্যাচ এর দুই জনকে দিয়ে এক জন যেন অন্য জনকে ধর্ষন করে এমন দৃশ্য দেখাতে বাধ্য করেন। এছাড়া যৌন কর্মী সেজে তার দেহ প্রদর্শন ও খরিদদার ধরার দৃশ্য প্রদর্শন করান। তৃতীয় লিঙ্গের ট্রেনে টাকা নেয়ার দৃশ্য, কয়েকটি যৌন উত্তেজক গান এর যৌন উত্তেজক দৃশ্য দেখানোসহ পরিচয় চেয়ে বিভিন্ন শব্দকে পরিবর্তন করে যৌনতা সম্পর্কিত শব্দ যোগ করে বলতে বলেন। বলতে অস্বীকার করলে শারীরিক নির্যাতনের হুমকির পাশাপাশি অনবরত ধমক দিয়ে বলতে বাধ্য করছিলেন।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের পরিবেশ বিষয়ক খলিলুর রহমান বলেন, ‘এখানে ছাত্রলীগের কর্মী ছাড়াও বাইরের বিভিন্ন মেসের শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। ছাত্রলীগ কখনো র্যাগিংয়ের পক্ষে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’ একই কথা বলেন মো. ফারহান রুবেল ও মেহেদী হাসান স্বাধীন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি। চিঠি পাওয়ার পর থেকে কাজ শুরু করে দিয়েছি।’
উল্লেখ্য, তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অধিকতর তদন্তের পর পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।