সুনামগঞ্জে বানের পানি কমলেও দূর্ভোগ চরমে

ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম ও পাহাড়ি ঢল কম নামায় সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শুক্রবার (২১ জুন) সকাল থেকে কোনও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানি আর বাড়েনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৪ সেন্টিমিটারে। বর্তমানে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার মাত্র ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ আজ ২০ সেন্টিমিটার পানি কমেছে।

এতে স্বস্তি ফিরেছে জেলার মানুষদের মনে। তবে নদীর পানি কিছুটা কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দূর্ভোগ কমেনি বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, তাহিরপুরসহ সাত উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়নের ১০১৮টি গ্রাম ঢলের পানিতে তলিয়ে গিয়ে ভেসে যায় ঘরে থাকা ধান-চাল, গৃহপালিত পশু ও আসবাবপত্র।

সেই সাথে তলিয়ে গেছে পুকুরের মাছ ও ফসলি জমি। এমনকি পানিবন্দি হয়ে এখনও চরম কষ্টে জীবনযাপন করছেন জেলার ১০ লাখ মানুষ। সেই সাথে জেলা সদরের সাথে এখনও সড়ক পথে যোগাযোগ বিছিন্ন রযেছে তাহিরপুর উপজেলার। এমনকি ছাতক, দোয়ারা বাজার, জগন্নাথপুর সহ কয়েকটি উপজেলার সাথে দূর্গম এলাকার ৪০ টিরও বেশি গ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ এখনও বিছিন্ন রয়েছে।

তবে পাহাড়ি ঢল কম নামায় ইতিমধ্যে পৌর শহরের তেঘরিয়া, আরপিন নগর, বড়পাড়া, ওয়েজখালি, মল্লিকপুর, ষোলঘর, নতুন পাড়া, মধ্যে বাজার সহ বিভিন্ন এলাকায় গতকাল হাটু পরিমাণ পানি থাকলেও বর্তমানে ১ থেকে দুই ইঞ্চি পানি রয়েছে। ধীরে ধীরে পৌর শহর থেকেও পানি কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক হচ্ছে যানবাহন চলাচল।

এদিকে, ব্যানার ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে পানিবন্দি মানুষরা আশ্রয় কেন্দ্রে গেলেও সেখানে গিয়ে তাদের পড়তে হয়েছে নতুন ভোগান্তিতে । আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে ইতিমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার অভাব ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ব্যানা আক্রান্ত মানুষরা।

আশ্রয়প্রার্থীরা জানান, ‘আমরা এখনও সরকারি ভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণের শুকনো খাবার পায়নি। সেই সাথে আশ্রয় কেন্দ্রে এসেও প্রতিনিয়ত আমাদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।’

ভোগান্তিতে পড়া বেতগঞ্জের মাসুক মিয়া বলেন, ‘পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে এখন ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বছরে বছরে বন্যার এমন ভোগান্তি কষ্টদায়ক।’

হাসননগরের পানি বন্দী জমির উদ্দিন বলেন, ‘অনেক কষ্ট আছি। চারদিকে পানি। ছেলে মেয়ে সহ সবাই না খেয়ে আছি।’

পৌর শহরের বাসিন্দা জলিল মিয়া বলেন, ‘শহর থেকে পানি কমায় ও রোদ উঠায় মনে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।’

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ‘চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুনামগঞ্জের নদী পানি কমে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে।
ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও প্রায় তিন দিন সময় লাগবে।