সিলেটসহ ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এতদিন শোনা যাচ্ছিল সিলেট সিটি করপোরেশনে এবারও মেয়র পদে প্রার্থী হবেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তবে যুক্তরাজ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আরিফের বৈঠকের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফররত সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সোমবার (১০ এপ্রিল) সাক্ষাৎ করেছেন তারেক রহমানের সঙ্গে। লন্ডনের অভিজাত কিংস্টন এলাকার একটি ভেন্যুতে তাদের এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক শেষে অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেয়র আরিফ জানিয়েছেন- দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি নির্বাচন করবেন না। পাশাপাশি দলে নিজের পদ ও আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে দলীয় প্রধানের সঙ্গে আলাপ করেছেন বলেও জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে সরাসরি কোনো আশ্বাসবাণী পাননি আরিফ।
দেশের বাইরে অবস্থান করায় এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জানা গেছে, দেশে ফিরে তিনি তার সিদ্ধান্ত জানাবেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক সালেহ আহমদ খসরু বলেন, বিএনপির হাইকমান্ড সিলেট সিটি করপোরেশনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখে থাকে। সময়ই বলে দেবে দলীয় সিদ্ধান্ত কী আসবে। যেহেতু বর্তমান সিটি মেয়র বিএনপি পরিবারের একজন, সেহেতু দল এটি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। আর এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন, হয়তোবা দল সেক্ষেত্রে নমনীয় থাকতে পারে বা মেয়র আরিফুলের প্রতিও নমনীয় থাকতে পারে।
সিসিকের চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সাবেক প্যানেল মেয়র বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, আমাদের দল নির্বাচনমুখী দল। দল কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটা না প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। যেহেতু বিএনপির রাজনীতি করি সেহেতু বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে আমি নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সব কেন্দ্র মিলিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯২ হাজার ৫৯৩ ভোট। আর বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮৬ হাজার ৩৯৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৬ হাজার ১৯৬ ভোট বেশি পেয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী।
সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয় ২০০২ সালে। প্রথম নির্বাচন হয় চার দলীয় জোট সরকার আমলে। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি পৌরসভা থাকাকালে চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বার বিজয়ী হন কামরান। তৃতীয় নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ নির্বাচনে কামরানের সঙ্গে মেয়র পদে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এতে আরিফুল হক পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ২৩০ ভোট।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক জাকির হোসেন। এরপর বদর উদ্দিন কামরান মনোনয়ন পেলেও শেষে নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে।
এদিকে ২০২০ সালে কামরানের মৃত্যুর পর থেকে মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরীকে ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ করার মতো প্রার্থীর অভাব দেখা দেয় সিলেটে। তবে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিসিক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু। সম্প্রতি লন্ডন থেকে সিলেটে এসে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।