সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত দুই উপজেলা বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসন। গতকাল ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ আসনে নির্বাচনের বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ছিলো ৬ জন। যার মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী (নৌকা), গণফোরামের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য) এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী (লাঙ্গল)-কে নিয়েই মূলত প্রতিদ্বন্দিতার আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
এছাড়া তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রব (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. জহির (ডাব) এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)’র প্রার্থী মো. মনোয়ার হোসাইন (আম) ছিলেন নির্বাচনী মাঠে।
তবে উচ্চ আদালতের আপিলে প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে আসনের ভোটের হিসেব নিকেশ পুরোটাই পাল্টে দিয়েছেন বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান। সিলেট-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এরই মধ্যে তাকে ট্রাক প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকেই বিরামহীন প্রচারণা চালাচ্ছিলেন অন্যান্য প্রার্থীরা। যার মধ্যে সাবেক ও বর্তমান তিন সংসদ সদস্যকে ঘিরেই আলোচনা হচ্ছিলো।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শফিকুর রহমান এই আসনের ২০০৮ সালে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের সমর্থক ছাড়াও শফিকুর রহমানের রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। এরফলে এবারের নির্বাচনে অনেকটা এগিয়েই ছিলেন শফিকুর রহমান।
২০১৪ এর নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনাদের ভোট বর্জনে এই আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী (লাঙ্গল)। সেবার আসন সমঝোতায় এই আসনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলো আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির ভোট এই আসনে তুলনামূলক কম হলেও সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে ইয়াহইয়া চৌধুরীর।
বিএনপি ও সমমনাদের ভোটে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হন গণফোরামের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য)। তবে এবার বিএনপি ভোটে নেই। এন্টি আওয়ামী লীগ ভোট বিবেচনায় শক্ত প্রতিদ্বন্দিতা গড়তে পারতেন তিনিও।
তবে মুহিবুর রহমানের প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় সব হিসেবই আবার নতুন করে কষতে হতে পারে। বিশ্বনাথে নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত মুহিবুর রহমানের রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। বিশ্বনাথের প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার প্রথম মেয়র মুহিবুর রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহু নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
১৯৭৮ সালে বিশ্বনাথ থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক এবং ১৯৮০ সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুহিব ১৯৮৫ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিশ্বনাথের প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরীকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মুহিবুর।
১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মকসুদ ইবনে আজিজ লামার কাছে হেরে যান মুহিব। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে যোগ দেন জাতীয় পার্টিতে, লাঙল প্রতীক নিয়ে বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালে ফের আওয়ামী লীগে ফেরেন, সেবার মনোনয়ন চেয়েও পাননি তিনি। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। তবে মহাজোটের প্রার্থী ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। শক্ত প্রতিদ্বন্দিতা করেও মোকাব্বিরের সাথে হেরে যান মুহিব।
তবে এই সব নির্বাচনে মুহিবের প্রাপ্ত ভোট নেহায়েৎ কম ছিলো না। তাই আসন্ন দ্বাাদশ সংসসদ নির্বাচনে অপর হেভিওয়েট প্রার্থীদের ভোটে ভাগ বসাতে পারেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এমনটাই মত অনেকের।