লাল মাটির সিলেট। এখানে একটি বাঁশের কঞ্চি পুঁতে রাখলেও কয়েক বছর পর ঝাড় হয়ে উঠে। তাই, সিলেটের মাটি বাঁশের জন্য উপযোগী ভেবে ২০১৩ সালে সিলেটের বিমানবন্দর এলাকায় ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইন্সটিটিউটের ভেতর গড়ে তোলা হয়েছিলো দেশের একমাত্র জাতীয় বাঁশ উদ্যান।
৯ বছর পর ওই এলাকা বাঁশঝাড়ে পূর্ণ থাকার কথা থাকলেও এখন সেই বাঁশ উদ্যানটিই গায়েব হয়ে গেছে! বাঁশের চারা রোপণের হিসেবে গড়মিল ও প্রকল্প ব্যয় নিয়েও রয়েছে লুকোচরি।
সরেজমিনে সম্প্রতি ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি ইন্সটিটিউটের প্রথম গেটের পাশে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ উদ্যানের সাক্ষী হিসেবে নষ্ট হতে চলা একটি প্রকল্প প্রস্তাবের সাইনবোর্ডেই রয়ে গেছে বাঁশ উদ্যানের নাম। আর মূল সাইনবোর্ডটিও ভেঙ্গে পড়েছে। বাঁশের বিলুপ্তি ঠেকানো ও গবেষণা কাজে ব্যবহারের জন্য উদ্যানটি করা হলেও ওখানে বাঁশ থাকা দূরের কথা উদ্যানেরই কোন অস্তিত্ব নেই।
এসময় কথা হয় ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি ইন্সটিটিউটের রেঞ্জার অশিম রায়ের সাথে।
তিনি জানান, ‘যখন প্রকল্প প্রস্তাব হয়েছিলো তখন একটি সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়। পরে তৎকালীন প্রধান বন সংরক্ষক এসে উদ্যানটির উদ্বোধন করলে সিমেন্ট-পাথর ও ইট দিয়ে একটি স্থায়ী ফলক লাগানো হয়। তবে সড়ক সংস্কার কাজের সময় এটি ভেঙ্গে পড়ে।’
তাঁর সাথে কথা বলা শেষে দেখা হয় বাগান মালী আব্দুর রশীদের সাথে। তিনি একটি টিলায় বাঁশের ১০-১৫টি চারা দেখিয়ে বাকিগুলো নষ্ট ও চুরি হয়ে গেছে বলে জানান।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের জুন মাসে ১ দশমিক ৪ শত ১৭ একর জায়গায় গড়ে উঠা এ উদ্যানের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুছ আলী। সে সময় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে জাতীয় এ বাঁশ উদ্যান নিয়ে ফলাও করে খবর প্রকাশ হয়। ওইসময়কার সকল সংবাদে ওখানে ৭শ বাঁশের চারা রোপণের তথ্য উল্লেখ করা হলেও ৯ বছর পর এসে সিলেটের বন বিভাগ থেকে পাওয়া গেলো ভিন্ন তথ্য। এমনকি শুরু থেকেই বাঁশ উদ্যানের ব্যয়ের পরিমাণ নিয়েও চলে আসছে লুকোচুরি।
সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তৌফিকুল ইসলাম প্রথমে বাঁশ উদ্যানের ব্যাপারে জানা নেই বলে জানান। তবে সিলেটের মাটি বাঁশ চাষের জন্য ব্যপক উপযোগি বলেও স্বীকার করেন। পরে এক দিনের সময় চেয়ে নিয়ে ওই কর্মকর্তা তৎকালীন সময়ে মাত্র ২০০ বাঁশের চারা রোপন হয়েছিলো বলে জানালেও প্রকল্প ব্যয় সম্পর্কে কোন তথ্য জানা নেই বলে জানান।