তিন মৌজার বাসিন্দাদের সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়ম

সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চারলেন নির্মাণ প্রকল্পে ডিজিটাল নকশায় সড়কের দুই পাশের ভূমি অধিগ্রহণে বাধা দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র। ডিজিটাল নকশা প্রস্তুত ও অধিগ্রহনের খসড়া চূড়ান্ত করার পরও নকশাকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সড়কের একপাশের ভূমি অধিগ্রহণ করার পাঁয়তারা করছে চক্রটি। এতে করে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের একপাশের ভূমি মালিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চারলেন নির্মাণ প্রকল্পে এমন অনিয়মের কথা জানান সদর উপজেলায় ৪ নম্বর খাদিমপাড়া ইউনিয়নের খিদিরপুর, আটগাঁও ও চুয়াবহর বটেশ্বর মৌজার বাসিন্দারা। এ অনিয়মের কারণে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চকগ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে পারভেজ আহমেদ। এসময় তিন গ্রামের অর্ধশতাধিক বাসিন্দা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয়রা বলেন, সিলেট সদর উপজেলার ৪ নম্বর খাদিমপাড়া ইউনিয়ন এলাকায় তামাবিল সড়ক সেটেলমেন্ট জরিপ আমলে রেকর্ডের সময় শুধু উত্তর পাশে প্রস্থ সম্প্রসারিত করে সেটেলমেন্ট রেকর্ড হয়। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে অন্যতম সিলেট-তামাবিল সড়ক চারলেন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্পের ডিজিটাল নকশা প্রস্তুতের কাজ পায় বেসরকারি সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভলাপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিভি)। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সুরমা গেট বাইপাস পয়েন্ট থেকে জালালাবাদ ক্যান্টমেন্ট এর পূর্ব সীমানা পর্যন্ত শুধু উত্তর পাশে অধিগ্রহণের জন্য খসড়া নকশা প্রস্তুত করে সবুজ দাগে চিহ্নিত করেন। এতে করে সড়কের উত্তর সীমানায় বাড়িঘর, দোকানপাট ও শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এককভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভেবে উত্তর সীমানার বাসিন্দারা দুই বছর আগে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেন। বিষয়টি নজরে আসায় সিসিডিভি কর্তৃপক্ষ পুনরায় প্রকল্পের নকশা সংশোধন করে রাস্তার উভয় পাশের ভূমি অধিগ্রহণের খসড়া ও ডিজিটাল নকশা তৈরি করে। সেটি সবুজ দাগে চিহ্নিত করে পরবর্তীতে চূড়ান্তভাবে লাল দাগে চিহ্নিত করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয়রা বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে তামাবিল সড়কের দক্ষিণ সীমানায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারের এ উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাধাগ্রস্ত করছে। নকশাকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে বাধা দিয়ে চারলেন প্রকল্পে শুধু তামাবিল সড়কের উত্তর পাশের ভূমি অধিগ্রহণে জোর দিচ্ছে। এমনকি ভিত্তিহীন কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে দরখাস্ত দাখিল করেছে। সিসিডিভি কর্মকর্তাদের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের যোগসাজেশ রয়েছে বলে জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা উল্লেখ করেন, সুরমা গেট বাইপাস পয়েন্ট থেকে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত (তামাবিলমূখী হলে বাম পাশে) রাস্তার উত্তর পাশে ৩টি মৌজা এলাকায় পেট্রোল পাম্প, এলপিজি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন কোম্পানির কারখানা ও জামে মসজিদসহ অসংখ্য পাঁচতলা বিল্ডিং অবস্থিত। এমন অবস্থায় সড়কের উত্তর পাশে বেশি ভূমি অধিগ্রহণ করলে বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ ব্যহত হবে। এমনকি মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সরকারের আর্থিক ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে।

স্থানীয়রা বলেন, সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক নির্মাণ শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং এটি আন্তঃদেশীয় কানেকটিভিটি প্রকল্প। যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, সংস্কৃতি ও যোগাযোগ স্থাপনের একটি সর্বাত্মক মাধ্যম। সরকারের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম না করে দুই পাশের ভূমি অধিগ্রহণের জোর দাবি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় বাসিন্দা মো. মখলিছ উর রহমান, ওজায়ের রহমান, রাহীক্ক আহমদ মজুমদার, ফখরুল ইসলাম, শাহজাহান আহমদ, মুহাইমিনুল হক তপু, সেবুল আহমদ, আব্দুল খালিক, হাসান আহমদ, আহমদ আলী, মটন মিয়া, নিমার আলী, নাসির উদ্দিন, সেলিম আহমদ, মঞ্জুর আলম, সেনাজ উদ্দিন, রাজু ইঞ্জিনিয়ার, ফারুক আহমদ প্রমুখ।