ঐতিহাসিক ‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলনকে চা শ্রমিক দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে আজ ‘প্রতীকী মুল্লুক চলো অভিযান’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ মে) বিকেল তিনটায় চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ এর উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এ উপলক্ষে একটি র্যালি মালনীছড়া চা বাগান থেকে শুরু হয়ে নগরীরর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সংগঠক অধীর বাউরীর সভাপতিত্বে ও রানা বাউরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী শেখ ফরিদ, কবি ও সাংবাদিক সজল ছত্রী, সংগঠনের প্রধান সংগঠক সঞ্জয় কান্ত দাস, হিলুয়াছড়া চা বাগানের প্রতিনিধি মজেন গঞ্জু, লাক্কাতুরা চা বাগানের জাহাঙ্গীর হোসেন, গুলনী চা বাগানের সাধন কুর্মী, কেওয়াছড়া বাগানের সঞ্জীব কুর্মী, দলদলির বিশাল গৌড়, তারাপুর বাগানের দোলন ওড়াং, চিতলমাটির মোহাম্মদ হান্নান প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, ১০২ বছর আগে চা শ্রমিকরা সৃষ্টি করেছিলেন এক সংগ্রামী ইতিহাস। ব্রিটিশ সরকার ও মালিকদের অত্যচার, নির্যাতন ও শোষনের বিরুদ্ধে তারা ঘোষণা করেছিলেন এক রক্তস্নাত বিদ্রোহ। পন্ডিত গঙ্গাদয়াল দীক্ষিত ও দেওশরনের নেতৃত্বে হাজারো চা শ্রমিক বাগান ‘বয়কট’ করে ফিরে যেতে চান ‘নিজ মুল্লুকে’। শত শত মাইল পথ পায়ে হেটে ১৯২১ সালে ২০ মে তারা পৌছান চাদপুর স্টীমার ঘাটে। সেখানে সরকার ও মালিকদের নির্দেশে নিরস্ত্র শ্রমিকদের উপর গুলি চালায় ভয়ংকর গুর্খা বাহিনী। মেঘনাঘাট রঞ্জিত হয় শ্রমিকের রক্তে নিহত হন হাজারো চা শ্রমিক। মৃত শ্রমিকদের পেট কেটে ফেলে দেয়া হয় মেঘনা নদীতে। গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় আন্দোলনের নেতা গঙ্গাদয়াল দীক্ষিতসহ বহু শ্রমিককে। কারাগারে অত্যাচারের প্রতিবাদে প্রতিবাদে অনশন করে আত্মাহুতি দেন গঙ্গাদয়াল দীক্ষিত। চা শ্রমিকদের এই আত্মত্যাগে জেগে ওঠে সম্পূর্ণ ভারতবর্ষ। চা শ্রমিকদের এই বিদ্রোহ সারা দুনিয়ায় পরিচিত হয়েছে “চরগুলা এক্সডাগ” নামে। কিন্তু আজ ক’জন জানি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে চা শ্রমিকদের এই বীরত্বের কথা?
আজ দেশে ব্রিটিশরা নেই, পাকিস্তানি উপনিবেশিক শাসন থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে। কিন্তু স্বাধীন দেশের ৫২ বছর অতিবাহিত হলেও চা শ্রমিকদের জীবনের বিশেষ কোন পরিবর্তন হয়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত জীবন যাপন করছেন। দীর্ঘ ১৯দিন আন্দোলন করে শেষে এই দুর্মূল্যের বাজারে চা শ্রমিকদের মজুরি ৫০টাকা বেড়ে দাড়াঁয় মাত্র ১৭০টাকা। তারপর মালিকরা বকেয়া এরিয়ার বিল সম্পূর্ণটা পরিশোধ করেনি। ৩০হাজার টাকার বকেয়া,দিচ্ছে মাত্র ১১হাজার। তাও পরিশোধ করবে কয়েক কিস্তিতে। ভূমির উপর কোন অধিকার নেই। ১৬৬টি বাগানের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে হাতে গোনা কয়েকটিতে। চা বাগানের ৪৭শতাংশ শিশু পুষ্টির অভাবে খর্বকায় হয়। উচ্চ শিক্ষা ও চাকুরি নেই বিশেষ কোটা। শ্রম আইনে শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা থাকলেও বাগানে তা প্রায় নেই। হাসপাতালের নামে চালু আছে ডিসপেনসারি, যেখানে প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছুই নেই। নেই প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ। শুধু তাই নয় দশ থেকে বারো বছর কাজ করেও অস্থায়ী শ্রমিকরা স্থায়ী হতে পারেন না।
এ রকম অবস্থায় অধিকার আদায়ে লড়ায়ের কোন বিকল্প নেই। এ লড়াইয়ের অঙ্গিকার নিয়েই আমরা পালন করছি ২০মে ঐতিহাসিক ‘চা শ্রমিক দিবস’। চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ দাবি তুলেছে, ২০ মে কে ‘চা শ্রমিক দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সবেতন ছুটি ঘোষণা এবং ‘চা শ্রমিক দিবস’র ইতিহাসকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তভুক্ত করার।
বক্তারা আলো বলেন, ২০মে ঐতিহাসিক মুল্লুক চলো আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে চা বাগানের মজুরি, শিক্ষাসহ সার্বিক মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।
সিলেট ভয়েস/এএইচএম