সিলেটসহ সারাদেশে গত নভেম্বর মাসে ৪৬৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৫৪ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া একই সময়ে আহত হয়েছেন ৭৪৭ জন।
এর মধ্যে গত মাসে সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। রোববার (৪ ডিসেম্বর) সংগঠনটি থেকে পাঠানো এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, দুর্ঘটনা নিহত ৫৫৪ জনের মধ্যে নারী ৭৮জন ও শিশু ৭১। মোট ১৯৪টি দুর্ঘটনার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২২৯ জন, যা মোট নিহতের ৪১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এছাড়া এসব দুর্ঘটনায় ১২৩ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ২০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৯ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। একই সময়ে ৩টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত, ৭ জন আহত ও ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। ৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র
দুর্ঘটনায় যানবাহন ভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২২৯ জন (৪১ দশমিক ৩৩ শতাংশ), বাস যাত্রী ২৮ জন (৫ দশমিক ০৫ শতাংশ), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-ড্রামট্রাক-মিক্সার মেশিন গাড়ি আরোহী ৩৪ জন (৬ দশমিক ১৩ শতাংশ), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার যাত্রী ৫ জন (০ দশমিক ৯ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ৯৩ জন (১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-ঘাসকাটা মেশিন গাড়ি) ৩১ জন (৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান আরোহী ১১ জন (১ দশমিক ৯৮ শতাংশ) নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরণ
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৯২টি (৪১.৪৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৮টি (৩১ দশমিক ৯৬ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৪টি (১৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৪৩টি (৯ দশমিক ২৮ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬টি ১ দশমিক ২৯ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরণ
দুর্ঘটনাসমূহের ৮১টি (১৭ দশমিক ৪৯শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০৬টি (৪৪ দশমিক ৪৯শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১২৬টি (২৭ দশমিক ২১শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৩৮টি (৮দশমিক ২০শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১২টি (২ দশমিক ৫৯শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনসমূহ
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-পুলিশভ্যান ২২ দশমিক ৯৮শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক-ডাম্পার ট্রাক-ট্যাঙ্ক লরি-মিক্সার মেশিন গাড়ি ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৮ দশমিক ৬৬শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ১৬ দশমিক ১১শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন-(নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-টমটম-মাহিন্দ্র-পাওয়ারটিলার-ধান মাড়াইয়ের মেশিন গাড়ি-ঘাস কাটার মেশিন গাড়ি) ৭শতাংশ, এবং বাই-সাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান ৩ দশমিক ৫৬শতাংশ।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৫৭ টি। (ট্রাক ১২৫, বাস ৯৫, কাভার্ডভ্যান ১৮, পিকআপ ৩০, পুলিশভ্যান ১, ট্রলি ১৫, লরি ৬, ট্রাক্টর ৮, ড্রাম ট্রাক ৭, ডাম্পার ট্রাক ৩, ট্যাঙ্কলরি ৩, মিক্সার মেশিন গাড়ি ২, মাইক্রোবাস ১০, প্রাইভেটকার ১২, অ্যাম্বুলেন্স ৩, মোটরসাইকেল ২১৭, থ্রি-হুইলার ১২২ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৫৩ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-টমটম-মাহিন্দ্র-পাওয়ারটিলার-ধান মাড়াইয়ের মেশিন গাড়ি-ঘাস কাটার মেশিন গাড়ি) বাই-সাইকেল ৭, প্যাডেল রিকশা ১৪ এবং প্যাডেল ভ্যান ৬টি।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩০ দশমিক ৬৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৩১ দশমিক ৪০শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, প্রাণহানি ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৯ দশমিক ৫০শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ১২ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪ দশমিক ১০ শতাংশ, প্রাণহানি ৩ দশমিক ৬১শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৬৯শতাংশ, প্রাণহানি ৭ দশমিক ২২শতাংশ ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৪২টি দুর্ঘটনায় ১৭৪ জন নিহত।সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ২৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং ময়মনসিংহ জেলায় সবচেয়ে বেশি ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জ, নড়াইল, ঝালকাঠি, লালমনিরহাট ও রাঙ্গামাটি জেলায়। এই ৫টি জেলায় ১১টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ১৮ টি দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা পর্যালোচনা দেখা গেছে, গত অক্টোবর মাসে ৪২৭ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮২ জন নিহত হয়েছিল। এই হিসাবে নভেম্বর মাসে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৮.৪৩ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ১৪.৯৩ শতাংশ। নভেম্বর মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছে ১৮.৪৬ জন, অর্থাৎ ১৯ জন। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৪৪৬ জন, অর্থাৎ ৮০.৫০ শতাংশ।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এ অবস্থার উন্নয়নে টেকসই গণপরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।