সিলেটে এক দিনে পৃথক স্থানে দুই স্কুলছাত্র ও মৌলভীবাজারে এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (১২ জুন) রাতে সিলেটের বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে ওই তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা তিনজনই আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ।
বিয়ানীবাজারে আত্মহত্যাকারী স্কুলছাত্রের নাম আহমদ আল আভি (১৩)। সে স্থানীয় খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যানিকেতনের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ওসমানীনগরে আত্মহত্যাকারী স্কুলছাত্রের নাম প্রান্ত দেব (১৭)। সে স্থানীয় গোয়ালাবাজার আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। আর কুলাউড়ার কিশোরীর নাম তানিয়া আক্তার তন্নি (১৭)। সে দশম শ্রেণিতে ওঠার পর পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় বলে জানা যায়।
বিয়ানীবাজারের স্কুলছাত্র আহমদ আল আভি মোবাইল গেমের প্রতি আসক্ত ছিল বলে জানা গেছে। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিয়ানীবাজার পৌরসভার শ্রীধরা এলাকার নিজ বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আভি বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য নোমান আহমদের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, মৃতদেহের পাশেই একটি স্মার্ট ট্যাব সচল অবস্থায় রাখা ছিল। এ সময় ‘ব্লু হোয়েল’ গেমটি খোলা ছিল এবং আভি গেমের শেষ ধাপে ছিল। এই পর্যায়ে তাকে আত্মহত্যার নির্দেশ দিয়েছিল মডারেটর। আত্মহত্যার পূর্বে সে মেয়েদের পোশাক পরে বুকের মধ্যে ‘৩০২’ নম্বর প্লেটের একটি স্টিকার সেঁটে নিয়েছিল। ওই স্কুলছাত্রের পরনে ছিল তার বড় বোনের কামিজ, ওড়না ও পায়জামা। তার মরদেহ ঝুলন্ত আর ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকা অবস্থায় ছিল।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকদিন থেকে স্কুলছাত্র আহমদ আল আভি বিভিন্ন ধরনের অনলাইনভিত্তিক গেম খেলত। কারও কোনো বারণ মানতো না সে। তবে সে যে ব্লু হোয়েল খেলত সেটা পরিবারের কারও জানা ছিল না।
জানা যায়, রোববার বিকেলে আভির পরিবারের সবাই আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেসময় আভি একাই বাড়িতে ছিল। সন্ধ্যার এক পর্যায়ে সে ঘরের দরজা বন্ধ করে গেম খেলতে বসে। এরপর কেটে যায় বেশ কয়েক ঘণ্টা। পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ফিরে অনেক ডাকাডাকি করেও তার কোনো সাড়া না পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। পরে প্রতিবেশীরা চিৎকার শুনে ছুটে এসে দরজা ভেঙে দেখেন ছেলেটি দড়ি গলায় লাগানো অবস্থায় ঝুলছে।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় জানান, গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি স্পষ্ট। তবে কী কারণে সে আত্মহত্যা করেছে, সেটি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে। ওই স্কুলছাত্রের পরনে ছিল তার বড় বোনের পায়জামা, কামিজ ও ওড়না।
এদিকে, সিলেটের ওসমানীনগরে রান্নাঘর থেকে প্রান্ত দেব নামের এক স্কুলছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে ওসমানীনগর উপজেলার গয়নাঘাট থেকে ওই স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে গয়নাঘাট এলাকার প্রদীপ দেবের ছেলে।
পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় বাসায় কেউ ছিল না। সন্ধ্যায় পরিবারের লোকজন এসে ডাকাডাকি করে ভেতর থেকে কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে রান্নাঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে প্রান্তের মরদেহ ঝুলে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাঈন উদ্দিন জানান, ঘরে কেউ না থাকার সুবাদে প্রান্ত দেব রান্নাঘরের তীরের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। তবে আত্মহত্যার কোনো কারণ উদঘাটন করা যায়নি। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
অন্যদিকে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় নিজ ঘর থেকে ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তানিয়া আক্তার তন্নি নামের এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের ডরিতাজপুর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সোমবার সকালে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তন্নি টিলাগাঁও ইউনিয়নের ডরিতাজপুর এলাকার বাসিন্দা ওমান প্রবাসী তাহির উদ্দিনের মেয়ে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন তন্নিকে ঘরে রেখে তার ভাই নজরুল দোকানে যান। বিকেল ৫টার দিকে বাড়িতে গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে ঢুকে দেখেন ওড়না গলায় পেঁচানো অবস্থায় বাঁশের তীরে ঝুলে আছে তার বোনের দেহ। খবর পেয়ে কুলাউড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
কুলাউড়া থানার উপ-পরিদর্শক মো. এনামুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি মা-বাবার কলহে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে তন্নি গলায় ফাঁস নিয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।