সিলেটি নাটকের অভিনেত্রী ও টিকটকার সনিয়া বেগম (২০) হত্যাকাণ্ডের একমাত্র অভিযুক্ত মামাতো ভাই মো. সজিব আহমদকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ৯টার দিকে র্যাব-৯ এর একটি টিম ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানাধীন সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। সজিব হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শরীফনগর গ্রামের মো. নুরুদ্দিনের ছেলে।
আজ মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেটে র্যাব-৯ এর সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান র্যাব-৯ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার মো. মোমিনুল হক জিডি-পি।
র্যাব-৯ এর অধিনায়ক মোমিনুল হক প্রেস ব্রিফিংকালে জানান, প্রায়ই সনিয়াদের বাসায় আসতেন সজিব। তিনি তার গর্ভবতী স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে গত ৭ দিন যাবৎ সনিয়াদের বাসায় অবস্থান করেছিলেন। ঘটনার আগের দিন (১১ ফেব্রুয়ারি) সনিয়া চাকরির সন্ধানে সজিবকে নিয়ে বিয়ানীবাজারে যাযন। ওইদিন বিয়ানীবাজার থেকে ফেরার পথে সিলেট শহরের শেখঘাটে সনিয়ার অসুস্থ খালাকে দেখে তারা রাত ১২টার দিকে সনিয়াদের বাসায় যান। ঘটনার দিন সকালে সনিয়ার সৎ বাবা অসুস্থ থাকায় পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে চলে যান। পরে দুপুর ১২টার দিকে পরিবারের সদস্যরা তার শয়নকক্ষে ঢুকে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। সনিয়ার মরদেহের গলার বাম পাশে কাটা এবং ডান হাতের কব্জির রগ কাটা পাওয়া যায়। পুলিশ এ সময় তল্লাশি করে কক্ষের খাটের তোষকের নিচ থেকে ধারালো রক্তমাখা একটি কাঁচি উদ্ধার করে।
র্যাব আরও জানায়, সজিবের নামে ঢাকার ভাষানটেক থানায় মামলা রয়েছে। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে শিশু অপহরণ ও সহায়তার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এ মামলায় তিনি গ্রেপ্তারের পর জেলও খেটেছেন।
এর আগে গত রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেট নগরীর শেখঘাট খুলিয়াটুলা আবাসিক এলাকার নীলিমা-১৪ নম্বর বাসা থেকে সনিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। সনিয়া সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কলাছড়া গ্রামের বিল্লাল আহমদের মেয়ে ও দক্ষিণ সুরমার নুরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী। তিনি মা ও সৎ বাবার সঙ্গে ওই বাসার ৪র্থ তলায় থাকতেন। সনিয়া সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত নাটকে অভিনয় করতেন।
পারিবারিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের আগের রাতে (শনিবার) সনিয়াদের বাসায় রাত্রিযাপন করেন তার মামাতো ভাই সজিব আহমদ। রোববার সকালে সনিয়া পরিবারের সদস্যদের সাথে নাস্তা করেন। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যরা হাসপাতালে ভর্তি সনিয়ার সৎ বাবা সেলিম মিয়াকে দেখতে সেখানে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর সজিবও বাসা থেকে বের হয়ে যান। দুপুর ১২টার দিকে সাড়া-শব্দ না পেয়ে সনিয়ার ভাবি তাকে ডাকতে যান। সনিয়ার কক্ষে ঢুকে তিনি তার গলাকাটা লাশ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে এবং ওই কক্ষ থেকে একটি রক্তমাখা কাঁচি জব্দ করে।
ওইদিনই সনিয়ার পরিবারের দাবি করেছিল এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সজিব জড়িত। সনিয়ার ঘর থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার খোয়া গেছে বলেও দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা। আর ঘটনার পর থেকে সজিব গা ঢাকা দেওয়ায় এ ব্যাপারে পুলিশের সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব-৯ ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে। ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে র্যাব তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সজিবের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরে সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানাধীন সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।