শ্রীলঙ্কার কূটনীতিক এসালা রোয়ান ভিরাকুন ২০২০ সালের মার্চে সার্কের মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার মেয়াদ আগামী মার্চে শেষ হবে। পরবর্তী মহাসচিব হওয়ার কথা রয়েছে আফগানিস্তান থেকে। কিন্তু আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেটি করতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। যেখানে ভিরাকুনের মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় ৯ মাস আগেই সদস্য রাষ্ট্রগুলো অনুমোদন দিয়ে দিয়েছিল, সেখানে নতুন মহাসচিব নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনও শুরুই হয়নি।
সার্কের মহাসচিব নিয়োগ প্রক্রিয়া বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, আটটি দেশ থেকে আদ্যক্ষর অনুযায়ী সার্কের মহাসচিব নিয়োগ হয়। যেমন প্রথম মহাসচিব ছিলেন বাংলাদেশ থেকে এবং পরের মহাসচিব হয়েছেন ভুটান থেকে।
বর্তমান মহাসচিব শ্রীলঙ্কার জানিয়ে তিনি বলেন, আদ্যক্ষর অনুযায়ী এর পরের মহাসচিব আসবে আফগানিস্তান থেকে। কিন্তু আফগানিস্তানের পট পরিবর্তনের পরে এ বিষয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় এক বছর আগে নিয়োগ প্রক্রিয়া সাধারণত শুরু হয়। যে দেশ থেকে মহাসচিব নিয়োগ দেওয়া হবে, ওই দেশটি তাদের পছন্দের ব্যক্তির নাম অন্য রাষ্ট্রগুলোকে জানায় তাদের সম্মতির জন্য। অন্য রাষ্ট্রগুলো যাচাই বাছাইয়ের পরে তাদের মতামত আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। কারো কোনও আপত্তি না থাকলে সার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভায় নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়। এই অনুমোদন সাধারণত দায়িত্ব নেওয়ার অনেক আগেই দেওয়া হয়।
বর্তমান সমস্যা
২০০৫ সালে নতুন সদস্য হিসাবে আফগানিস্তান সার্কে যোগ দেয়। ওই সময়ে দেশটির নাম ছিল ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তান। কিন্তু তালেবানরা গত বছরের আগস্টে ক্ষমতা দখলের পর নতুন নাম দেওয়া হয় ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্তান।
এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, সার্কের সিস্টেমে দেশটির নতুন নাম সমস্যা তৈরি করেছে। কারণ, সেখানে ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্তান বলে কিছু নেই।
সার্কের সদস্য হচ্ছে রাষ্ট্র এবং সেখান থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হয়, কিন্তু আফগানিস্তানের প্রতিনিধিদের বিষয়ে দুই-একটি সদস্য রাষ্ট্রের আপত্তি আছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, এর ফলে সার্কে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন বৈঠকসহ অন্যান্য কার্যক্রমে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ কীভাবে দেখে
সার্কের মহাসচিব নিয়োগ এবং পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘সার্কের গতিশীলতা গত কয়েক বছর ধরেই কমে গিয়েছে। নেপাল গত কয়েক বছর ধরে চেয়ার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে। এই কয়েক বছরে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন করার বিষয়ে কোনও কূলকিনারা করা যায়নি।’
তিনি জানান, এর মধ্যে আফগানিস্তানের পটপরিবর্তন বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে। কারণ, দেশটি সার্কের পূর্ণ সদস্য। কাবুলের অংশগ্রহণ ছাড়া বিভিন্ন বৈঠক করা মুশকিল। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশটিকে বাদ রেখে করা হচ্ছে। কারণ আফগানিস্তানের ব্যাপারে দুই-একটি দেশের আপত্তি আছে।
পরাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সার্কের মহাসচিবের সম্প্রতি ঢাকা সফরের সময়ে সার্কের স্থবিরতা বা অচলাবস্থা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সব সদস্যের সঙ্গে নতুন উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা সেটি নিয়ে আলোচনা করবেন।’
মহাসচিব কে হবেন সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি এখন বলা যাবে না। ডিসেম্বরের মধ্যে পরিবেশ-পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে। আফগানিস্তানের বিষয়ে জাতিসংঘের একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এছাড়া সার্কের সদস্যদের মনোভাবেরও পরিবর্তন আসতে পারে ‘