ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, ইভিএম ব্যবহার করে বর্তমান সরকার আবারও একটি পাতানো নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। ইভিএম হচ্ছে ইলেকট্রনিক্স ভ্যালকিবাজির মেশিন। জনগণ বুঝে গেছে এই ইভিএম ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। ইভিএম এবং এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। তাই নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় নিতে হবে।
শনিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে হবিগঞ্জ জেলা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত সংগঠনের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ যখন রাস্তায় নেমে এসেছে, তখন বিরোধীদলের সভা-সমাবেশ নিয়ে ইত্রামি করছে সরকার। নিজেরা ঠিকই সভা-সমাবেশ করছে, আর অন্যদের সভা-সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করছে পুলিশ দিয়ে।
তিনি নির্বাচন কমিশনকে ‘প্রধানমন্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগের টিস্যু’ উল্লেখ করে বলেন, এই কমিশন প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তা-ই করে। এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার দ্বারা কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
নুরুল হক নুর বলেন, দুর্নীতি আর লুটপাট করে এই সরকার দেশকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশ এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে।
প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে দলীয়করণ করে প্রশাসন যন্ত্র ভেঙে দিয়েছে এই সরকার। প্রশাসনের লোকজন নিজেদেরকে জমিদার মনে করেন। একেকটি জেলার এসপি-ডিসিরা নিজেদেরকে স্থানীয় জমিদার ভাবেন। তাদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ কোনো ধরনের সেবা পান না। এমনকি সাধারণ মানুষজন তাদের কাছেই যেতে পারেন না। প্রশাসন আর আওয়ামী লীগের নেতারা মিলে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প।
তিনি জঙ্গিবাদের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সরকার জঙ্গিবাদের নাম দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। জঙ্গিবাদের তকমা দিয়ে আলেম-উলামাদের ওপর নির্যাতন করছে।
সাবেক এই ভিপি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী ক্ষমতার প্রধান হয়েও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হুমকি দিয়ে বলেন- বেশি বাড়াবাড়ি করলে আবারও জেলে পাঠিয়ে দেবো। একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দেশবাসী এমন বক্তব্য কখনোই আশা করেনি।
বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের কথা উল্লেখ করে ভিপি নুর বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬ শতাধিক লোক গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। এই সরকারের আমলে বাংলাদেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের মতো বসবাস করছেন। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ আমাদের সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত অধিকার। কিন্তু সরকার বিরোধীদলগুলোকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না, পথে পথে বাধা দিচ্ছে।
তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার কথা উল্লেখ বলেন, শেখ হাসিনা অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের বিচার করলেও গত ১৩ বছরে দেশের সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যার বিচার করেননি। আমরা ক্ষমতায় এলে কিবরিয়াসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।
জেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট চৌধুরী আশরাফুর বারী নোমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হোসেন জীবনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, ব্যারিস্টার জিসান মহসিন, নাজমুস সাকিব, সরকার নুর এ এরশাদ, শহিদুল ফাহিম, সোহরাব হোসেন, ডা. আজাদ আলী সুমন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, শাহাব উদ্দিন শুভসহ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার নেতৃবৃন্দ।