অর্থনৈতিক মন্দায় বিপর্যস্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায় সরকারি চাকরিতে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মূলত নিজেদের খরচ কমাতে এ উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার।
বার্তাসংস্থা এএফপি সোমবার (২ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ২.৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে দৌড়ঝাপ করছে শ্রীলঙ্কা। তবে এক্ষেত্রে আইএমএফ শর্ত জুড়ে দিয়েছে, ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এজন্য কমাতে হবে সরকারি ব্যয়।
আইএমএফ আরও জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় এখন যে সংখ্যক সরকারি পদ আছে তাও কমাতে হবে। বর্তমানে দেশটিতে ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন।
এছাড়া শর্ত দেওয়া হয়েছে, সব পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি করতে হবে এবং সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান লোকসানের মধ্যে আছে সেগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ীই সরকারি চাকরিতে নতুন নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কায় একসঙ্গে ২০ হাজার সরকারি চাকরীজীবি অবসরে যান। সাধারণ সময়ে ২ হাজার ৫০০ জনের মতো অবসরে গেলেও এই মাসে সংখ্যাটি প্রায় আট গুণ বেশি ছিল। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে অবসরের বয়স ৬৫ থেকে ৬০ করার কারণেই একসঙ্গে এতগুলো পদ শূন্য হয়। যেগুলোতে নতুন করে আপাতত কোনো নিয়োগ দেওয়া হবে না।
এছাড়া সরকারের আয় বাড়াতে শ্রীলঙ্কায় বছরের প্রথম থেকেই ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট ট্যাক্স দ্বিগুণ করা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ৬৫ শতাংশ।
এদিকে গত বছরের এপ্রিলে গণবিক্ষোভের মুখে পালিয়ে যান শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশে। এরপর প্রেসিডেন্ট হন রনিল বিক্রমাসিংহে। নতুন বছরের শুরুতেই তিনি জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার সংকট এখনো শেষ হয়নি। যদি শ্রীলঙ্কাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় তাহলে আগে ঋণের বোঝা দূর করতে হবে।
এছাড়া অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয়ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে দেশটিতে। লঙ্কান অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যদি কোনো কর্মকর্তা ট্রেজারি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা না করে ৫০০ মিলিয়ন রুপির বেশি বিনিয়োগ অনুমোদন দেন তাহলে ওই কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এদিকে মাত্র ছয় মাস আগে এক লিটার জ্বালানি তেলের জন্য শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ কয়েক কিলোমিটার লাইন ধরেছিলেন। তবে এখন দেশটির জ্বালানি, খাদ্য এবং সারের সমস্যা অনেকটা দূর হয়েছে।