১৯ নভেম্বর (শনিবার) সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র বিভাগীয় গণসমাবেশ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের ঘাটতি ও উচ্চমূল্য, জ্বালানি-ভোজ্য তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পূনর্বহালের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করতে যাচ্ছে দলটি।
দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন, রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে থাকার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তাদের হাতে নেই, তাই রাষ্ট্রীয় মালিকানা সাধারণ জনগণের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়া আন্দোলন-সংগ্রামের অংশ হিসেবে এ বিভাগীয় সম্মেলনের ডাক দিয়েছে দলটি। এতে সিলেট বিভাগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন দলটির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকেরা।
এদিকে, তিন দফা দাবিতে সুনামগঞ্জে শুক্র ও শনিবার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি ও জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সমাবেশে অংশ নিতে আগের দিন সিলেটে যেতে বেগ পোহাতে হবে বিধায় বুধবার থেকে আগেভাগেই শান্তিগঞ্জসহ সুনামগঞ্জ জেলা থেকে সিলেটে যাওয়া শুরু করেছেন নেতা-কর্মীরা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, ‘সারা দেশে বিএনপির সম্মেলনকে বাধাগ্রস্ত করতে সরকারের যোগসাজশে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিচ্ছেন মালিক-শ্রমিকরা। সরকারের ইন্দনেই তারা এসব করছেন। যা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আন্দোলন করবো, আমাদের কথা আমরা বলবো, এতে এতো বাঁধা কেনো? আমাদের আন্দোলন সংগ্রামকে ঠেকানোর জন্য এতো চেষ্টা কেনো? তবে এটা পরিষ্কার যে, অবরোধ ঘোষণা করে, পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে জিয়ার সৈনিকদের আটকানো যাবে না।’
তারা বলেন, ‘আমরা গত দুই সপ্তাহ ধরে উপজেলার প্রতিটি গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে নির্বাচনি প্রচারণার মতো সম্মেলনের প্রচার করেছি, গণসংযোগ করেছি, লিফলেট বিতরণ করেছি। এ উপজেলা থেকেই কয়েক হাজার নেতা-কর্মীরা সিলেটে যাবেন সম্মেলনে অংশ নিতে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু নেতা-কর্মী সিলেটে চলেও গেছেন।’
বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার থেকেই অনেক নেতা-কর্মীরা সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে শান্তিগঞ্জসহ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে সিলেটে গিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেও বাস, ট্রাক, সিএনজি করে অনেক নেতা-কর্মীরা সিলেটে যাচ্ছেন। আত্মীয়-স্বজনের বাসা, বন্ধুদের মেস, এমনকি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ক্যাম্প করে সুনামগঞ্জ জেলার নিজ নিজ উপজেলার ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছেন। আবার অনেকে নৌকা যোগেও যাত্রা শুরু করেছেন। জগন্নাথপুর আর ছাতক থেকে অনেক মানুষ পায়ে হেঁটে সম্মেলনস্থলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা। তাদের প্রত্যাশা সুনামগঞ্জ জেলা থেকেই হাজার হাজার মানুষ বিএনপির বিভাগীয় এ সম্মেলনে অংশ নিবেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি পরিবহণ মালিকরা দু’দিনের অবরোধের ডাক দিয়েছেন। তাই দু’দিন আগে আজকেই (বৃহস্পতিবার) শনিবারের সম্মেলনে যোগ দিতে সিলেটে যাচ্ছি। সেখানে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আমার উপজেলার ক্যাম্পে অবস্থান করবো।’
শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার, ভাতের অধিকার, জীবন বাঁচানোর অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আগামীর রাষ্ট্র নায়ক তারেক রহমানের যোগ্য নেতৃত্বে দেশের মানুষ জীবনপণ লড়াইয়ে অবতির্ণ হয়েছে। দেশের মানুষ অবশ্যই এ সংগ্রামে বিজয়ী হবেন ইনশাআল্লাহ।’
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনছার উদ্দিন বলেন, ‘পরিবহণ ধর্মঘট দিয়ে বিএনপির এ জনস্রোত আটকে রাখা যাবে না। সরকারের নির্দেশে পরিবহণ মালিকরা যে অবরোধের ডাক দিয়েছে তা উপেক্ষা করে হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা শনিবারের সম্মেলনে যাবেন। আমাদের উপজেলা থেকে কম করে হলেও দুই হাজার নেতা-কর্মীরা সিলেটে যাবেন। ইতোমধ্যে অনেকে চলেও গেছেন।’
এদিকে, লামাকাজীর এমএ খান সেতুর টোল, ছয়হারা সেতুর টোল ও সুনামগঞ্জ জেলা বাস টার্মিনাল সংস্কারের দাবিতে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দু’দিনব্যাপী সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে পরিবহণ অবরোধের ডাক দিয়েছেন পরিবহণ বাস মালিক সমিতি।