সবার বাড়িতে বস্তা বস্তা টাকা, নিয়ন্ত্রণ করবো কীভাবে: সিইসি

নির্বাচনে অর্থশক্তির ব্যবহার সামাল দিতে রাজনৈতিক দলের পরামর্শ চাইলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সিইসি বলেন, ‘অর্থশক্তিকে আমরা কীভাবে সামাল দেবো? আপনারা আমাকে একটা বুদ্ধি দেন। দেশে অর্থ বেড়েছে। আমাদের সবার বাড়িতে বস্তা বস্তা টাকা। বস্তা বস্তা অর্থ আমরা নির্বাচনে ব্যয় করি। এই অর্থ নিয়ন্ত্রণ করবো কীভাবে?’

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপকালে সিইসি এসব কথা বলেন। তিনি এ সময় ভোটে অর্থশক্তির ব্যবহার বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও আহ্বান জানান।

ইসিতে জমা দেওয়া প্রার্থীর নির্বাচনি খরচের হিসাবের সঙ্গে প্রকৃত খরচের মিল থাকে না এমনটি জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘যেটা প্রকাশ্যে হয়, তার কিছুটা নির্বাচন কমিশনে দেখানো হয় যে, ৫ লাখ টাকা খরচ করেছে। তার বাইরে গিয়ে যদি আমি গোপনে ৫ কোটি টাকা খরচ করি, কীভাবে আপনি আমাকে ধরবেন বা আমি আপনাকে ধরবো। এ জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘একটি অপসংস্কৃতি হয়ে গেছে। পয়সা ঢালছি। মাস্তান হায়ার করছি। প্রফেশনাল কিলারও হায়ার করতে খুব বেশি পয়সা লাগবে না। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের সবাইকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অর্থশক্তি, পেশি শক্তির ব্যাপারে আমরা এখনি কিছু বলতে পারবো না। মাঠে আপনাদের থাকতে হবে। তথ্যগুলো পাঠালে আমরা কিন্তু সাহায্য করবো।’

ভোটে ইভিএম প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘লাঠি দিয়ে হকিস্টিক দিয়ে ইভিএম মেশিনটা ভেঙে ফেলতে পারবেন, কিন্তু এখানে ভোটের নড়চড় হবে না। একজন লোক যদি ১০০টা করে (ব্যালটে), পাঁচ জন লোক যদি ৫০০টা করে ভোট দেয়। ভোট দিলো পাঁচ জন, কিন্তু ভোট কাউন্ট হলো ৫০০। ভোটের হার তো অনেক বেশি। কিন্তু সেটি কি ৫০০ ভোট নাকি ৫ ভোট। পাঁচ জন যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করলো সেটি ৫০০ জনের পক্ষে। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আছে। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, সমস্যাগুলো বুঝে নিয়ে আমরা চেষ্টা করবো কীভাবে ব্যালেন্স করে একটি অর্থবহ, নিরপেক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন করা যায়।’

ইসির ওপর আস্থা রাখার জন্য রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের ওপর একটু আস্থা রাখুন। আস্থা রাখতে গিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলে হবে না। আপনাদের নজরদারি থাকতে হবে। আমরা কী আসলেই সাধু পুরুষ না ভেতরে ভেতরে অসাধু। সেই জিনিসটা আপনারা যদি নজরদারি না রাখেন, তাহলে আপনারাও আপনাদের দায়িত্ব পালন করলেন না। কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে। কোনও কমপ্লেইন পেলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে পাঠান। অনেকগুলো টেলিফোন থাকবে সে সময়। ক্যামেরা দিয়ে হয়তো আমরা অনেকগুলো সেন্টার ওয়াচ করতে পারবো। আমরা প্রতিশ্রুতি যে দিচ্ছি, তার কিছু মূল্য থাকা উচিত। একেবারে যে আমরা ডিগবাজি খেয়ে যাবো তা তো নয়। সেটি হওয়ার কথা নয়।’

সিইসি আরও বলেন, ‘১৮ সালের যে নির্বাচনের কথা বলেছেন, এবার ওভাবে নির্বাচন হবে, এটি আপনারা আশা করবেন না। আমরা সেটি (২০১৮ এর নির্বাচন) জানিও না, দেখিওনি। নির্বাচন নিয়ম ও আইন অনুযায়ী হবে। আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করবো। পাশাপাশি আপনাদের (রাজনৈতিক দল) অনুরোধ থাকবে, আপনারাও কিছু দায়িত্ব নেবেন। দায়িত্ব নিয়ে অর্থশক্তি, পেশিশক্তি, ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা করবেন। আমরা দায়িত্বটা শেয়ার করবো।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের অবশ্যই চাপে রাখবেন। আমি বিশ্বাস করি, এটা প্রয়োজন আছে। আপনাদেরও আমাদের ওপর নজরদারি রাখতে হবে। আমাদের থেকে কোনও অনিয়ম লক্ষ্য করলে তা প্রকাশ করে দেবেন। আমরা কোনোভাবেই পক্ষপাতিত্ব করতে চাই না।’