মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাণিজ্যিকভাবে করলা চাষ করে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। শুধু লাভবান নয়, করলা চাষের মাধ্যমে বদলে গেছে গ্রামটির নাম। মানুষের কাছে এখন ‘করলা গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পাইকাররা গ্রামটিকে ‘করলা গ্রাম’ নামেই ডাকেন। পাইকাররা এই গ্রাম থেকে করলা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন।
এদিকে উপজেলায় চাষকৃত ‘করলা’ প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মতো বিক্রি করা যেতে পারে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন।
সরেজমিনে উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের পাড়ের টং গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুরো গ্রামজুড়ে করলার মাঁচা। সবুজ পাতায় ঘেরা এই মাঁচার নিচে ঝুলছে করলা। কৃষকরা মাঁচা থেকে করলা সংগ্রহ করছেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই গ্রামের করলা পাইকারদের হাত ধরে চলে যাচ্ছে সারা দেশে। গ্রামটির করলা সারাদেশে বেশ চাহিদা রয়েছে।
করলা চাষি মুহিবুর রহমান বলেন, ‘সিজন অনুযায়ী টিয়া সুপারের করলা চাষ করে লাভবান হয়েছি। করলা চাষের কারণে এই গ্রামের নাম এখন করলা গ্রাম দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমরা সবাই লাভবান হয়েছি। বেকারদের কর্মসংস্থানের জায়গা হয়েছে। দেশের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। আমরা চাই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে বিক্রি করতে। প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার কেজির মতো করলা বিক্রি হয়েছে। গাছ এখনও ভালো রয়েছে, আশাকরি আরো ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার করলা বিক্রি করতে পারবো। ৫ বিঘা জমিতে করলা চাষ করেছি, আমার দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’
হবিগঞ্জের বাহুবল থেকে আসা পাইকার মো. মাসুক মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রতি বছরই এখান থেকে করলা ক্রয় করি। ঢাকা কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। গতবছর থেকে এবছর ফলন ভালো। বাজার দরও ভালো রয়েছে। রমজান হওয়াতে মালের দাম কিছুটা কম। রমজান ছাড়া ভালো দামেই বিক্রি হয় করলা।’
করলা চাষি নুরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১০ বছর যাবত করলা চাষ করছি, লালতীরের টিয়া সুপার টিয়া। জাত খুব ভালো। এই করলা চাষ করলে লাভবান হওয়া যায়। কোন ক্ষতি হয় না, আর এগুলো ফসলও ভালো। করলার ওজন অনেক ভালো হয়। এবার টিয়া সুপার চাষ করেছি, মাল আসা শুরু হয়েছে। কিছু বিক্রি করেছি, আরও কিছু বিক্রি করা বাকি রয়েছে। গেছে বছরের তুলনায় এবছর ফলন অনেক ভালো হয়েছে।’
লাল তীর সীড লিমিটেডের ডিভিশনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী জানান, ‘পাড়ের টং গ্রামটি মূলত কৃষি অধ্যুষিত এলাকা। এই গ্রামটিতে কৃষকরা ১০ থেকে ১২ বছর যাবত লাল তীরের হাইব্রিড টিয়া এবং টিয়া সুপার করলা চাষ করছেন। এই বছর বৃষ্টি একটু কম হয়েছে, তারপরও অন্যান্য বছর থেকে ফলন অনেক ভালো হয়েছে। টিয়া একটি দিবস নিরপেক্ষ হাইব্রিড জাত। এটা মূলত আগাম মৌসুমে এই এলাকার কৃষক চাষ করেন, এবং অধিক লাভবান হন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশা করছি এই করলা গ্রামটি দিনদিন বাংলাদেশের একটি রোল মডেল হয়ে যাবে। এটা দেখে অন্য গ্রামেও করলা চাষ বাড়বে। এখানে মূলত দুটি জাতের করলা চাষ হয়, একটি টিয়া ও আরেকটি টিয়া সুপার। ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফলন সংগ্রহ করা যায়, যার জন্য করলা চাষে অতি আগ্রহ এখানকার কৃষক। দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এখানে ছুটে আসেন, এবং বিভিন্ন আড়ৎদাররা এখানে এসে করলা সংগ্রহ করে সরাসরি ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছেন।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন জানান, এ বছর শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে করলা চাষ করা হয়েছে। করলা চাষ লাভজনক হওয়ায় দিনদিন এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৌসুম এখন আরো দেড় দুইমাস বাকি রয়েছে, যদি কালবৈশাখী ঝড় না হয় তাহলে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মতো করলা বিক্রি করা যেতে পারে।