শেখ হাসিনার ভারত সফর সফল করতে দুই দেশই তৎপর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে ৫ সেপ্টেম্বর ভারত যাচ্ছেন। এই সফরকে সফল করতে জন্য কাজ করছে উভয় দেশের সরকার।

সফরের আগে আগে দীর্ঘ ১২ বছর পর যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হয়ে গেছে। পররাষ্ট্র, জ্বালানি, স্বরাষ্ট্রসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো তাদের বৈঠক করে ফেলেছে। সবগুলো বৈঠকের একটি প্রতিফলন এই সফরে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে এক ডজনের ওপর চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে, এর মধ্যে কোনটি সই হবে সেটি নিশ্চিতভাবে জানার জন্য আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে সামস বলেন, ‘প্রস্তুতিমূলক বৈঠক যতগুলো করা সম্ভব, ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। আমাদের পক্ষ থেকে পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

একটি সফল সফরের লক্ষ্যে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই সরকারের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আমরা একটি ভালো সফরের আশাবাদী।’

রাজনৈতিক গুরুত্ব

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন গতি পায় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর। প্রায় সবক্ষেত্রে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। দুই দেশের সর্ব্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে বোঝাপড়া অত্যন্ত ভালো। তবে সম্প্রতি চীনের প্রতি বাংলাদেশের মনোযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে এ ধরনের একটি আলোচনা ভারতের সরকারের বাইরে বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার এবং সেটি হচ্ছে অন্য দেশের প্ররোচনায় প্রতিবেশীর ক্ষতি হয় এমন কোনও কাজ করবে না ঢাকা। এবারের সফরে হয়তো সেই বার্তাটি পুনর্ব্যক্ত করতে পারে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাশফি বিনতে সামস বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা ও ব্যপ্তি অনেক বেশি। এখন আমাদের সম্পর্ককে লালন করতে হবে।’

ভৌগোলিক, ইতিহাস, সাংস্কৃতিক দিক থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এত নিবিঢ় যে, অন্য কোনও দেশের পক্ষে ওই জায়গা নেওয়া সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।

বাণিজ্য

বাংলাদেশের রফতানি ভারতে অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় ২০০ কোটি ডলার হয়েছে। একইসঙ্গে ভারত থেকে আমদানি বৃদ্ধি পেলেও পণ্যগুলোর বেশিরভাগ শিল্পের কাঁচামাল অথবা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। এছাড়া ভারত থেকে বিনিয়োগও আসছে বাংলাদেশে, যা অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাশফি বিনতে সামস বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে অনেক সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছি। এছাড়া যেকোনও গতিশীল সম্পর্কে নতুন সমস্যা তৈরি হবে এটি স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে যেটি জরুরি সেটি হচ্ছে, সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আন্তরিক হওয়া এবং সেটি দুই দেশের সরকারের মধ্যে আছে।’

পানি সম্পদ

দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট রিভার কমিশনের বৈঠক গত সপ্তাহে হয়ে গেছে এবং কয়েকটি সিদ্ধান্তও হয়েছে। সাতটি নদীর পানি প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত ইতোমধ্যে আদান-প্রদান করা হয়েছে। আরও নতুন আটটি নদীর তথ্য-উপাত্ত আদান-প্রদান করার বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। গঙ্গা নদীর পানির সর্ব্বোচ্চ ব্যবহার, কুশিয়ারা নদীর পানি উত্তোলনসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে এই সফরে হয়তো সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাশফি বিনতে সামস বলেন, ‘১৯৯৬ সালে গঙ্গা চুক্তি করা হয় ৩০ বছর মেয়াদে এবং এটি ২০২৬ এ শেষ হবে। যে পানি আমরা পাচ্ছি সেটির সর্ব্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের একটি তাগিদ আমাদের আছে।’

এছাড়া, অববাহিকা-ভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনাও চায় বাংলাদেশ এবং এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ আছে বলে তিনি জানান।