ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানিতে বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসেসমেন্ট ভ্যালু ২ ডলার বাড়ানোর প্রতিবাদে গত ৮ জানুয়ারি থেকে সিলেট বিভাগের সব স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ করে দেন আমদানিকারকরা। এতে কর্মহীন হয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের হাজারো শ্রমিক।
এদিকে, হঠাৎ করে শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে হাজার হাজার পাথর শ্রমিক। এসময় মহাসড়ক দিয়ে পর্যটকবাহী বাস, নোহা, সিএনজি সহ সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে ভোলাগঞ্জ ১০নং এলসিঘাট এলাকায় নারী-পুরুষ সহ হাজারো পাথর শ্রমিক শুল্ক কমিয়ে পাথর আমদানি স্বাভাবিক রাখতে মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় শুল্ক বৃদ্ধি না করে চুনাপাথর আমদানি স্বাভাবিক রাখতে সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক কিছু সময় অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দেন শ্রমিকরা। পরে বিক্ষোভকারীরা চুনাপাথর আমদানিকরক গ্রুপের অফিসের সামনে থেকে ভোলাগঞ্জ বাজার পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার মিছিল করে এসে প্রতিবাদ সভা করে।
কর্মসূচি চলাকালে পাথর শ্রমিক ও আমদানিকারকরা বলেন, ‘কয়েক মাস পরপর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্ক বৃদ্ধি করার ফলে আমরা কিছু দিন পরপর বেকার হয়ে পড়ি। গত ৮ জানুয়ারি থেকে এক সাপ্তাহ ধরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় আমরা বেকার হয়ে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে বিপাকে পড়েছি। চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকলে কর্মহীন শ্রমিকদের ঘরের রান্নার চুলাও বন্ধ থাকে। শ্রমিকেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটায়।
পাথর শ্রমিক ৪৫ বছর বয়সী সিমা রাণী বলেন, ‘আমরা স্বামী সন্তান সহ চারজন পাথর শ্রমিকের কাজ করি। ৪ মাস আগেও একবার শুল্কের টাকা বাড়ানোর কারণে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ ছিল। তখন আমরা প্রায় মাসখানেক কর্মহীন ছিলাম। এবার আবার শুল্কের টাকা বাড়ানোর কারণে এলসির মালিকেরা পাথর আমদানি বন্ধ করেছে। গত ৬ দিন ধরে আমরা কোন কাম-কাজ করতে পারছি না। আমরা দৈনিক কাজ করতে না পারলে ঘরের বাজারও করতে পারি না। বাচ্চাদের নিয়ে অনেক কষ্ট আছি। ট্যাক্সের টাকা কমিয়ে তাড়াতাড়ি পাথর আমদানির ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে আকুল অনুরোধ।’
ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট চেম্বার অফ কমার্সের পরিচালক মজিবুর রহমান মিন্টু বলেন, ভারত থেকে পাথর ও চুনাপাথর আমদানির ওপর বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু প্রতি মেট্রিক টনে দুই ডলার বৃদ্ধি করে। এই বাড়তি শুল্ক দিয়ে পণ্য আমদানি করতে হলে আমদানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই, সিলেটের সবগুলো বন্দর ও শুল্কস্টেশন দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর পাথর আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ৮৫ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। পাথর আমদানি বন্ধ থাকাশ ভোলাগঞ্জ সহ সারা সিলেটে হাজার হাজার স্টোনক্রাশার মেশিন বন্ধ হওয়াতে নিম্ন আয়ের পাথর শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছেন।
ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, কয়েক মাস পরপর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সিলেটের সকল শুল্ক স্টেশন ও স্থল বন্দরের আমদানির উপর শুল্ক বৃদ্ধি করে সিলেটের পাথর ব্যবসাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সিলেটের পাথর ব্যবসা বিদ্বেষী উপর মহলের প্রভাবশালী কিছু মানুষের যড়যন্ত্রে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চার মাস আগে শুল্ক বৃদ্ধি করার পর আবারও শুল্ক বৃদ্ধির চিঠি দিয়েছে। আমরা শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদ করে পূর্বের ন্যায় শুল্ক দিয়ে পাথর আমদানির দাবীতে সারা সিলেটে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছি। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের দাবী মানা না হলে আরো কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।