সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নে ‘মাই ম্যান’ দিয়ে হাওর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রাইজুলের বিরুদ্ধে। আর এতে বাঁধের কাজ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।
পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের খাই হাওরে ৩১ ও ৩৩ নম্বর বাঁধের পিআইসিতে চেয়ারম্যানের আপন ভাই প্রাক্তন ইউপি সদস্য শহিবুর রহমান, আপন ভাগ্নে কোহিনুর মিয়া ও ‘তথাকথিত’ ব্যক্তিগত সহকারি মিলাদ হোসেন সাদ্দামকে নিয়ে প্রকল্প গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে সাদ্দাম হোসেনকে পিআইসি থেকে বাদ দিতে ইতোমধ্যে ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকার ২৩ কৃষক, ৭ ইউপি সদস্যসহ ৩০ জন।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) জমা দেওয়া এই অভিযোগপত্রে তারা উল্লেখ করেন, খাই হাওরের ৩১ নম্বর পিআইসি কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মিলাদ হোসেন সাদ্দামকে, যাকে ২০২২-২৩ অর্বছরে পিআইসির অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক অব্যাহতি দেওয়া হয়। এবছরও আমাদের ইউনিয়নের পিআইসি কমিটি গঠনের গণশুনানিতে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও কৃষকরা তাকে অযোগ্য ব্যক্তি হিসাবে মত প্রকাশ করেন। এতে ৩১ নম্বর পিআইসি ঝুঁকির মধ্যে থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে কমিটি থেকে মিলাদ হোসেন সাদ্দামকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি করেন অভিযোগকারীরা। এছাড়াও অভিযোগ আছে, চেয়ারম্যান তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিজের লোকদের দিয়ে এই দুই কমিটি গঠন করেছেন।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে নামে ‘সিলেট ভয়েস’। অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের খাইহাওরের ৩১ ও ৩৩ নম্বর পিআইসি গঠনে স্বজনপ্রীতি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রাইজুল। ৩৩ নং পিআইসি কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে প্রাক্তন মেম্বার শহিবুর রহমানকে। যিনি ইউপি চেয়ারম্যানের আপন ছোট ভাই। ১শ ২৬ মিটার জায়গার এই প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ লক্ষ ১ হাজার টাকা। একই হাওরের ৩১ নম্বর পিআইসিতে সভাপতি করা হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যানের আপন ভাগ্নে মো. কুহিনূর মিয়াকে। এই প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিলো সাবেক ইউপি সদস্য রায়েল আহমদকে। অজ্ঞাত কারণে রায়েলকে সরিয়ে নিজের ‘কথিত’ পিএস মিলাদ হোসেন সাদ্দামকে সাধারণ সম্পাদক করেন ইউপি চেয়ারম্যান। ৩১ নম্বর প্রকল্পের ১ হাজার ৩৫ মিটার জায়গার বিপরীতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা।
চেয়ারম্যানের এমন ভূমিকায় সমালোচনার ঝড় বইছে ইউনিয়নব্যাপী। সাধারণ কৃষকরা মনে করছেন, হাওর রক্ষার বাঁধ যেখানে হাজারও কৃষকদের ফসল রক্ষার নিয়ামক সেই সংবেদনশীল বাঁধ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার পক্ষের লোকেরা যে হীনমন্যতার পরিচয় দিচ্ছেন, স্বজনপ্রীতি দেখাচ্ছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের জামখলার হাওর অংশের সলফ গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলাম। এ হাওরে প্রায় ২ একর বোরো জমি আছে তাঁর। অপর কৃষকের নাম আবদুল মতিন। তাঁর বাড়ি উমেদনগর গ্রামে। খাইহাওরে প্রায় ২ একর জমি আছে তাঁরও। তাঁরা বলেন, আমাদের রিজিক নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। পানি আসলে কৃষকদের নিজের মাথায় মাটি কেটে বাঁধ রক্ষা করতে হয়। এসব বাঁধ নিয়ে যখন স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠে তখন খুব খারাপ লাগে৷ এটা নিশ্চিত যে স্বজনপ্রীতি হলে ফসল রক্ষা বাঁধে ঠিক মতো কাজ হবে না। আমাদের ফসল হারানোর শঙ্কা থাকবে। আমাদের দাবি, যেভাবেই হোক, বাঁধের কাজ যেনো ঠিক সময় ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।
পূর্ব বীরগাঁও ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য জোবায়ের আহমদ ও ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য দিদারুল হক দিদার বলেন, প্রকৃত কৃষক ছাড়া ক্ষমতাবলে ভাই, ভাগ্না ও নিজের লোক সাদ্দামকে দিয়ে দুইটি প্রকল্পের কমিটি গঠন করেছেন। অথচ বাঁধের কোনো ক্ষতি হলেই আমাদের দৌঁড়াতে হয় বাঁধে বাঁধে। এটা স্বজনপ্রীতি। প্রাক্তন ইউপি সদস্য রায়েল মিয়ার নাম বাদ দিয়ে সাদ্দামের নাম ঢুকিয়েছেন চেয়ারম্যান।
রায়েল মিয়া বলেন, স্বজনপ্রীতি করে চেয়ারম্যান সাহেব বাঁধের টাকা পকেটে ঢোকানোর ধান্ধা করছেন। হাওরে আমার নিজের প্রায় ৬ একর জমি আছে। আমি এর আগেও কাজ করেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। ওয়ার্ক ওর্ডার পাওয়ার পরেও কোন কারণে আমার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে আমার জানা নেই। অন্যায় ভাবে আমাকে বাদ দিয়ে তার পিএসকে কমিটিতে দিয়েছেন।
মিলাদ হোসেন সাদ্দামকে তার পিএস নয় দাবি করে পূর্ব বীরগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রাইজুল বলেন, কমিটির ব্যপারে আমি কিছুই জানি না। এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা (স্বজনরা) কৃষক, সেই যোগ্যতাবলে গণশুনানির মাধ্যমে তারা কমিটি পেয়েছে। সাদ্দামের বিষয়ে আমি কোনো সুপারিশ করি নি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা বলেন, স্বজনপ্রীতির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সাদ্দামের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে দেবো।