সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নে ফের বেড়েছে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা। এসব চুরির ঘটনায় আতঙ্কে ভোগছে এলাকাবাসী।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁওয়ের বড়বাড়ি গ্রামের মৃত ফয়জুর রহমানের বসতঘরে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চোর চক্রের কেউ ধরা পড়েনি।
এসময় চোরেরা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ দুই লাখ ২০ হাজার টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি নিয়ে যায়। চুরি যাওয়া জিনিসপত্রের অর্থমূল্য প্রায় দশ লাখ টাকা, এমনটি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত মৃত ফয়জুর রহমানের স্ত্রী আমিনা বেগম তমা।
খবর পেয়ে শুক্রবার সকাল এগারোটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী। একইসময় পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জগলুল হায়দারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্রাহ্মণগাঁও বড়বাড়ি গ্রামের মৃত ফয়জুর রহমানের স্ত্রী আমিনা বেগম তমার বোন অসুস্থ থাকায় তিনি তার সাথে সিলেটে অবস্থান করছিলেন। বাড়িতে কোনো লোকজন না থাকায় গভীর রাতে মূল দরজার (লোহার গ্রিল) তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। প্রতিটি কক্ষের আলাদা আলাদা তালা ভেঙে তিনটি ঘর তছনছ করে চোরেরা। এসময় শয়নকক্ষের আলমিরার সিন্দুক ও ড্রয়ার ভেঙে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ দুই লাখ ২০ হাজার টাকা ও প্রয়োজনীয় অনেক কাগজপত্রাদি নিয়ে যায় চোর চক্র।
এ ঘটনায় রীতিমতো বাকরুদ্ধ ভুক্তভোগী আমিনা বেগম তমা। তিনি কাতরকণ্ঠে জানান, সিলেট থেকে এসে আমি আমার বাবার বাড়িতে উঠেছিলাম। কিন্তু রাতেই চোরেরা আমার সব নিয়ে গেলো।
তিনি আরও বলেন, তার স্বামী ফয়জুর রহমান ২০১৮ সালে সৌদি আরবের রিয়াদ শহরে মৃত্যু বরণ করেন। আমাদের ছোট দু’জন পুত্র সন্তানও আছে। দুঃখ-কষ্টে জীবন কাটাচ্ছি। সহায় সম্ভল বলতে এই স্বর্ণালঙ্কার ও চুরি যাওয়া নগদ টাকাগুলোই ছিলো। আমার ঘরের লোহার গ্রিল ও তালা ভেঙে আমার সব কিছু নিয়ে গেলো চোরেরা। আমার মনে হচ্ছে কোনো একটি চক্র উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে আমার এই ক্ষতি করেছে। যা নিয়েছে তার মূল্য দশ লাখ টাকার মতো হবে। সব হারিয়ে এখন আমি নিঃস্ব। এতিম দুই সন্তানকে নিয়ে কীভাবে জীবন কাটাবো? আমি পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ভুক্তভোগীর ভাসুর আমিনূর রহমান বলেন, সকাল ঘুম থেকে উঠে গাছ থেকে আম পড়েছে কি না তা দেখতে ঘরের পেছনের দরজা খুলতেই তমার ঘরের রান্না ঘরের দরজা খোলা। বিষয়টি ভালোভাবে দেখতে তমার জা শাহিমা আক্তারকে বলি। সে ঘরের সামনে গিয়ে গ্রিলে টান দিলে দেখতে পায় গ্রিল খোলা। তখনই আশপাশের লোকজনকে ডেকে আনি। শাহিমা আক্তারও একই কথা বলেন।
বড়বাড়ি গ্রামের মুরব্বি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, আমার বাড়িতেই ঘটনা। এটা নজিরবিহীন। আমরা বিভিন্নভাবে খবর পাচ্ছি এলাকায় চোরের উৎপাত বেড়েছে। আজ আমার বাড়িতেই ঘটনা। আমরা চাই, পুলিশ প্রশাসন আরো কঠোরভাবে যেন এই চক্রকে দমন করেন।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, চুরি হওয়ার খবর পেয়ে সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এসব বিষয়ে আমরা অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ অনেকের সাথে কথা বলছি৷ আমাদের টিম কাজ করছে। আমি নিজেও থাকবো এ এলাকায়। এ কাজে এলাকাবাসীর সহযোগিতা আশা করছি। আমরা আশাবাদী, অচিরেই এ চোরচক্রটি ধরা পড়বে।
উল্লেখ্য, গত দুই সপ্তাহ ধরে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের শত্রুমর্দন, চন্দ্রপুর কোনারবাড়ি, নিদনপুর ও ব্রাহ্মণগাঁওয়ের বড়বাড়িতে প্রায় দশ থেকে এগারোটি চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যদিও চুরি বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
সিলেট ভয়েস/এএইচএম