সিলেট নগরীর জালালাবাদ থানা এলাকায় যুবলীগ নেতা রানা আহমদ শিপলুকে ফাঁসাতে দুই তরুণী ধর্ষণের মামলাটি সাজানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন পশ্চিম পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা ও শিপলুর স্ত্রী তাহমিনা খানম। তিনি এ সাজানো মামলা থেকে তার স্বামীকে অব্যাহতি এবং হয়রানি বন্ধের দাবি জানান।
সোমবার (৫ সেপ্টম্বর) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
তাহমিনা খানম লিখিত বক্তব্যে জানান, তার স্বামী একজন আমদানি ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী। রাগীব রাবেয়া হাসপাতালের পাশে তাদের ফার্মেসি ব্যবসা রয়েছে। এর পাশাপাশি শিপলু যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই তার স্বামী ও পরিবারের মান-সম্মান ক্ষুন্ন, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতিতে বাধা এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে স্থানীয় ছাত্রদলের চিহিৃত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী তানভীর একের পর এক ষড়যন্ত্রমূলক মামলা সাজাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় তানভীর, তানিয়া ও জুবেল মিলে দুই তরুণীকে দিয়ে বানোয়াট ও মিথ্যা কল্পকাহিনীতে হোটেল গ্রীন হিলে ২৩ আগস্টে ধর্ষণের ঘটনা সাজিয়ে গত ২৮ আগস্ট এসএমপির জালালাবাদ থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
তাহমিনা খানম আরও বলেন, ওই দুই মামলার বাদী এবং মামলার প্রধান আসামি তানিয়া হোটেলে কক্ষ ভাড়া নেন নাম ও পরিচয় গোপন করে এবং ৫ দিন পরে ধর্ষণ ঘটনার নাটক সাজিয়ে তাদের পরিচিত ও মামলায় উল্লেখিত নগরীর খুলিয়াপাড়ার আব্দুল ওয়াদুদ ও জাহানারা বেগমের ছেলে মেহেদী হাসান সুমনকে সাথে নিয়ে জালালাবাদ থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে সুমন জানান, দুই তরুণীকে তিনি চেনেন না। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ফলে তার রাজনৈতিক ছোট ভাই অভি ওই দুই তরুণীকে তার কাছে নিয়ে এসেছিল, তাই তিনি থানায় নিয়ে যান। তাছাড়া অভি তাকে বলেছে ওই দুই তরুণী মুরাদ নামের এক ড্যান্সারের সাথে ড্যান্স (নৃত্য) করেন। তাই মুরাদ অভির মাধ্যমে সুমনের কাছে ওই দুজনকে পাঠিয়েছেন। আর ড্যান্সার মুরাদের সাথে কথা বললে তিনি জানান, দুই তরুণীকে চেনেন এক সপ্তাহ আগে থেকে। ড্যান্স শিখতে তার কাছে গিয়েছিল তারা। কিন্তু তাদের চলাফেরা ও চারিত্রিক দিকটি তার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছিল। তাই তাদেরকে তিনি ড্যান্স ক্লাসে ভর্তি না করে আপাতত যাওয়া-আসা করতে বলেছিলেন। কিন্তু দুইদিন আসার পর ৫ দিন না এসে ৬ দিনের মাথায় ওই দুজন গিয়ে বলে তাদের মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে। তাই তা উদ্ধারের জন্য তার বড় ভাই তেলিহাওর গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতা সুমনের কাছে পাঠান। পরে কী হয়েছে তিনি আর জানেন না। মুরাদ ও সুমনের বক্তব্য শুনে দুই তরুণীর সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন- মামলার বিষয়ে কিছু জানতে হলে পুলিশের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে, তারা কিছু জানেন না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দুই তরুণী ধর্ষণের মামলায় গ্রীন হিল হোটেলের যে সকল কক্ষের কথা উল্লেখ হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ২৩ আগস্ট গ্রীন হিল হোটেলের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী ৩০১ নম্বর কক্ষে কোনো বর্ডার উঠেনি। তবে রেজিস্ট্রার খাতার ক্রমিক অনুযায়ী ৯৯১৫০, ৯৯১৫১ ও ৯৯১৫২ ক্রমিকে ৩০৩ নম্বর কক্ষে গৃহিনী পরিচয়ে উঠেন তিনজন নারী। এর মধ্যে দুই বোন ও একজন অন্য নারী ছিলেন এবং কোনো পুরুষের নাম উল্লেখ নেই। তাছাড়া মামলা দুটির এজাহারের বক্তব্যে বেশ গড়মিল আছে। নাট্যশিল্পী পরিচয়দানকারী তার মামলায় লিখেছেন, তাকে ২৩ আগস্ট রাত ১১টা ৫০ থেকে পরদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৪ জন মিলে ৫ বার ধর্ষণ করেন। আইএলটিএস পড়ুয়া পরিচয়দানকারী তার মামলায় উল্লেখ করেন, একই সময়ে তাকেও ঘুরে-ফিরে ৫ জন ৭ বার ধর্ষণ করেছেন। অথচ এই সময়ে তারা হোটেল কর্তৃপক্ষ অথবা হোটেলে থাকা অন্য বোর্ডারকে চিৎকার করে ডাকেননি বরং পরদিন বেলা ১টা পর্যন্ত ছিলেন। সেখান থেকে গিয়েও থানায় কোনো অভিযোগ করেননি অথবা জরুরি নম্বর ৯৯৯ এ ফোন করেও কিছু জানাননি। হোটেলে উঠা আইএলটিএস পড়ুয়া তরুণী কোনো আইএলটিএস সেন্টারে পড়ে না। ১ নম্বর আসামি এবং মামলা দুটির বাদী দেহব্যবসায়ী। আর তার প্রমাণ পাওয়া যাবে মামলার বাদী দুই তরুণীর ডিএনএ টেস্ট করলে। যেমনটি পাওয়া গিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বোলার রুবেলের কথিত প্রেমিকা হ্যাপির শরীরে। এছাড়া শিপলুর প্রতিপক্ষ তানভীর একজন মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং ছাত্রদল নামধারী সমাজের চিহিৃত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১৭টি মামলা রয়েছে। তানিয়া ও জুবেলের সাথে তানভীরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। তাই শিপলুকে ধর্ষণ ঘটনার মামলায় ফাঁসানোর জন্য পূর্ব থেকে পরিকল্পনা করে তানভীর। তানভীর, জুবেল ও তানিয়ার মোবাইল নম্বরের কল লিস্ট তুললে স্পষ্ট হয়ে যাবে ঘটনাটি।
তাহমিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তার স্বামী রানা আহমদ শিপলুকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ মামলার আসামি করা হয়েছে। তাই এই মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা থেকে তার নিরপরাধ স্বামীর মুক্তি চান এবং ধর্ষণ ঘটনা নাটকের পরিকল্পনাকারী ছাত্রদল নামধারী সন্ত্রাসী তানভীরসহ ধর্ষণ নাটক তৈরিকারীদের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার দাবি করেন।
তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং এসএমপি’র পুলিশ কমিশনার ও জালালাবাদ থানার ওসিসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।