মা রহিমা খাতুনকে ২৯ দিন পর অক্ষত ফিরে পাওয়ার পর থেকে ‘মা ফিরে এসেছেন, এর চেয়ে ভালো খরব হয় না’ বললেও এখন কিছুটা দ্বিধায় পড়েছেন মরিয়ম মান্নান। মা ‘রহিমা খাতুন আত্মগোপনে ছিলেন’, ‘আত্মগোপন পরিকল্পনায় মরিয়ম নিজে জড়িত ছিলেন’, ‘নিখোঁজ সময়ে অবস্থান বিষয়ে রহিমা খাতুনের সন্দেহজনক ব্যাখ্যা’ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ চিড় ধরিয়েছে মরিয়মের আত্মবিশ্বাসে?
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মরিয়ম বলেছেন, মা ‘আত্মগোপন’ করতে পারেন জানলে আমি এগোতাম না। মাকে খুঁজতাম ঠিকই কিন্তু মামলা করতাম না। আমি এখনো বুঝতে পারছি না, যদি আত্মগোপনে গিয়ে থাকেন, তাহলে কেনো গেলেন?
ছাড়া পেয়েও সন্তানদের কাছে ফিরে না এসে কেনো ফরিদপুরে সাবেক ভাড়াটেদের বাসায় ছিলেন, সে বিষয়ে মা কী বলছেন প্রশ্নে মরিয়ম বলেন, ‘মা এখনো সব বলছেন না, নিজে থেকে যা বলেছেন, সেটুকু জানি। তিনি আমাকে বলেছেন, তিনি ভেবেছিলেন, আমাদেরও মেরে ফেলেছে বা ক্ষতি হয়েছে। তিনি ওই বাসার মানুষদের বলেছেন, আমার সন্তানদের খবর দাও, আমাকে নিয়ে যাক। কিন্তু মায়ের এই বক্তব্যের সঙ্গে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের তথ্য মিলছে না বলে আমাকে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।’ কিন্তু মা এমন কেনো করবেন, সে উত্তরও খুঁজছেন মেয়ে মরিয়মও।
‘মা আত্মগোপন করেছেন, এমন তো আমি জানতাম না। আমার বোন আমাকে জানায় মা মিসিং। সে আমার সৎবাবার কাছ থেকে জেনেছে। তারপর আমি যাই। আমরা পাঁচ বোন চিন্তাই করিনি মা কোথাও যাবেন। আমরা সবাই এখন আর্থিকভাবে ভালো আছি। আমরা সবাই মাকে টাকা দিই। মায়ের যে কোনও অভাব আছে, তাও না। আব্বা থাকতে বা মারা যাওয়ার পর আমাদের বড় করতে মায়ের অবদান ছিল। ফলে আমি মায়ের খুব কাছাকাছি না থাকলেও, যোগাযোগ তেমন না রাখলেও ছিল। আমরা আসলে খুলনার ওই বাসায় যেতে চাই না,’ বলেন মরিয়ম।
আইনিভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী, এমন প্রশ্নে মরিয়ম বলেন, ‘মাকে পাওয়াটাই লক্ষ্য ছিল। ফলে আমরা মামলাটা এখানেই ডিসমিস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে, এভাবে মামলা ডিসমিস হবে না। তদন্তের মধ্য দিয়ে পুলিশ এটা করবে।’
তাকে নিয়ে যে ট্রল হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে নিয়ে যা ছবি পোস্ট হচ্ছে, সেটা সহ্য করে নিতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের পরিবারের সদস্যদের ছবি ব্যবহার করে ট্রল করবেন না, প্লিজ।’
গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার নলকূপ থেকে পানি আনতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি রহিমা বেগম। ওই রাতেই রহিমা বেগমের ছেলে দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর ২৯ দিনে রহিমা বেগমের ছেলে-মেয়েরা মায়ের সন্ধান চেয়ে এলাকায় পোস্টার লাগানো, ঢাকা ও খুলনায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করেন।
এর মধ্যে গত ২২ সেপ্টেম্বর এক ফেসবুক পোস্টে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা গ্রামে উদ্ধার হওয়া এক নারীর লাশকে নিজের মায়ের বলে দাবি করেন মরিয়ম মান্নান। তবে ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর একটি বাসা থেকে মরিয়মের মা রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
এরপর বদলে যেতে থাকে প্রেক্ষাপট। মরিয়ম মান্নানের মায়ের ‘নিখোঁজ’ হওয়া নাকি তিনি ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন সে নিয়ে নতুন আলাপ শুরু হয়। মা রহিমা বেগম এখনো স্পষ্ট করে কিছু না বলায় মেয়ে মরিয়ম বিভ্রান্তিতে থাকলেও অপেক্ষা করছেন সত্য উন্মোচিত হবে।