গণআন্দোলনের মধ্যে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে আশ্রয় নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। নিরাপত্তার জন্য দেশ ছাড়লেও সেটির নিশ্চয়তা যেন মালদ্বীপেও মিলছে না।
আর তাই দক্ষিণ এশীয় এই দ্বীপরাষ্ট্র থেকে এবার রাজাপাকসে পাড়ি জমাতে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুরে। শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।
শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপে অবস্থান করছেন এবং দেশটির রাজধানী মালে থেকে নির্ধারিত সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে এখনও রওনা হননি। যদিও বুধবার রাতেই তার সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল।
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে ডেইলি মিরর আরও জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে, তার স্ত্রী ইওমা রাজাপাকসে এবং দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তার বুধবার(১৩ জুলাই) রাতে মালে থেকে এসকিউ৪৩৭ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে তারা ফ্লাইটে আরোহণ করেননি।
অন্যদিকে মালদ্বীপের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় মালে থেকে সিঙ্গাপুরে পৌঁছাতে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের জন্য একটি প্রাইভেট বিমানের ব্যবস্থা করার বিষয়টি এখন আলোচনায় রয়েছে।
এদিকে সামরিক বিমানে করে মালদ্বীপের ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পৌঁছানোর এবং সেখান থেকে বের হওয়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
ভিডিওতে দেখা যায়, ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রাজাপাকসেকে অপমান করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার করছে অবশ্য এই ভিডিওটি যাচাই করা হয়নি বলে জানিয়েছে এএফপি।
অন্যদিকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মালদ্বীপে পৌঁছানোর পর প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে দেশটির একটি এক্সক্লুসিভ রিসোর্টে অবস্থান করছেন এবং বুধবার রাতের দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত বা সিঙ্গাপুরে উদ্দেশে রওনা হতে পারেন।
কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, ‘তিনি এই দু’টি স্থানে নির্বাসনে যাচ্ছেন। এসব স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বেশ চ্যালেঞ্জের হবে কারণ উভয় দেশেই বহু সংখ্যক শ্রীলঙ্কান রয়েছে।’
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একটি সামরিক বিমানে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপ পালিয়ে যান। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ অনুমোদনের পর প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে এবং তার স্ত্রী কাতুনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুই দেহরক্ষীসহ মালদ্বীপে পাড়ি জমান। মূলত বুধবার খুব ভোরে বিমান বাহিনীর একটি ফ্লাইটে তাদের দেশত্যাগের সুযোগ দেওয়া হয়।
সংবাদমাধ্যম বলছে, শ্রীলঙ্কার কোনো আইনেই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের বিধান নেই। তবে পদত্যাগের পর গ্রেপ্তার হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে শ্রীলঙ্কাজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। মূলত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন তিনি।
শ্রীলঙ্কায় পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবে আগামী ২০ জুলাই। রাজাপাকসের পলায়নের পর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী ভাবে বুধবার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।