উদযাপনে কেন সময়ের বিধি নিষেধ, সেই প্রশ্ন তুলেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
ওই নিষেধাজ্ঞা ভেঙে পহেলা বৈশাখে বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠান করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
রাজধানীর রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাতিরঝিল ও রবীন্দ্র সরোবরসহ দেশে যেসব স্থানে খোলা জায়গায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হবে, সেগুলো সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে বর্ষবরণের সব আয়োজন বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করাসহ ভুভুজেলা বাজানো ও বিক্রি থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে গত ২৯ মার্চ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক আহকামউল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে নববর্ষের অনুষ্ঠানে সময়ের ওই বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।সেই দাবি মেনে না নেওয়ায় এবার সাংস্কৃতিক জোট নিষেধাজ্ঞা ভেঙে অনুষ্ঠান করার ঘোষণা দিল।
জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “বাংলা নববর্ষে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। আগামী ১ বৈশাখ ১৪৩১ বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
“রাত ৯টা পর্যন্ত আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে দলীয় সংগীত, দলীয় আবৃত্তি, নৃত্য, নাটক, একক সংগীত ও একক আবৃত্তি। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে থাকবে বিশিষ্ট বাউল শিল্পীদের পরিবেশনা।”
নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতা করতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “বাঙালির প্রাণের উৎসব পালনে আমাদের কেন এই নিয়মের বেড়াজাল মানতে হবে? আমরা অনুষ্ঠান আয়োজন করব।”
সময় বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গত ২৯ মার্চ দেওয়া বিবৃতিতে সাংস্কৃতিক জোট বলেছিল, “বাঙালির সবচাইতে বড় সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িক উৎসব হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। শত শত বছর ধরে গ্রামবাংলার বৈশাখী মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ খেলাধুলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ পালিত হয়ে আসছে। নগরায়নের সাথে সাথে নগরে-শহরেও এ উৎসব সম্প্রসারিত হয়েছে। সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে থাকবে।সেখানে বলা হয়, “বাঙালির সবচাইতে বড় সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িক উৎসব হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। শত শত বছর ধরে গ্রামবাংলার বৈশাখী মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ খেলাধুলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ পালিত হয়ে আসছে। নগরায়নের সাথে সাথে নগরে-শহরেও এ উৎসব সম্প্রসারিত হয়েছে। সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে থাকে।”
“বৈশাখী উৎসব এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের জন্য প্রত্যেক উপজেলায় সরকারি বরাদ্দ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের নির্দেশনা থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত বলেই বিবেচিত হচ্ছে। সকল জাতীয় দিবস এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের সময়ের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও শুধুমাত্র বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ আয়োজনকে সীমিত করে দেওয়া কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, এই সিদ্ধান্তের ফলে বাঙালি সংস্কৃতি-বিরোধী শক্তি উল্লসিত হবে।”