হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে কমলপুর হযরত শাহজালাল (র.) আলিম মাদরাসা। যেখানে এ বছর দাখিল পরীক্ষায় ৩০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে শতভাগ পাশ করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ জন। এর মধ্যে ৭ জন নারী শিক্ষার্থী।
২০১৪ সালে মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের কমলপুর গ্রামের আনিসুর রহমান আদিল নামে এক ব্যক্তি তার নিজের জায়গায় গড়ে তুলেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি বছর এই মাদারাসায় শতভাগ পাশ করে জেলায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি মাদরাসা শিক্ষায় এনেছে আধুনিকতা। রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব। বিজ্ঞান গবেষণাগার। বর্তমানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ২২ জন শিক্ষক ও ৪১৭ জন শিক্ষার্থী।
এখান থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী খোকন মিয়া জানায়, ২০২২ বর্ষের দাখিল পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। নবম শ্রেণিতে তার পয়েন্ট ছিল ৩.০০। তিনি কখনো আশা করেনি জিপিএ-৫ পাবে। এই মাদ্রাসার শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সে প্লাস পেয়েছে।
সে জানায়, মাদ্রাসায় দূরবর্তী ছাত্ররা পড়াশুনা করতে পারে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখানে আইসিটি ল্যাব আছে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স কাজও শিখানো হয়। এখানে পড়ালেখার মান অত্যান্ত ভাল।
জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী নাঈমা আক্তার জানায়, এখানে মেয়েদের অনেক পর্দাসহকারে লেখাপড়া করানো হয়। মাদরাসায় কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় না। যদিও কোন সমস্যা হয় শিক্ষকরা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। এখানে কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। ছেলে মেয়েরা কাজ করতে পারে। সে গণিতে শতভাগ মার্ক পেয়েছে। এটার জন্য অনেক অবদান শিক্ষকদের।
জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী রাইহানা আক্তার জানায়, এই মাদ্রাসায় যারা শিক্ষক রয়েছেন উনারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে পড়ান। অনেক দূরদূরান্ত থেকে মেয়েরা এখানে আসে এবং থেকে পড়াশুনা করে। সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতে পরিবারের সহযোগিতার পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকার অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে।
আমিনুল ইসলাম ভুট্টো নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, চৌমুহনী ইউনিয়নে কোন মাদ্রাসা নেই। গত এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে খুবই আনন্দিত হয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যদি সরকারের সুদৃষ্টি থাকে তাহলে এই প্রতিষ্ঠান আরো উন্নতি করবে।
মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাসুদুর রহমান জানান, ‘সরকারকে ধন্যবাদ। কমলপুর হযরত শাহজালাল মাদ্রাসা ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মাধবপুর উপজেলার মধ্যে ভাল ফলাফল করে আসছে। এ বছর ২০২২ সালে সেরা ফলাফল হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ২২ জন শিক্ষক রয়েছেন। ৪শ এর উপরে ছাত্র-ছাত্রী এখানে অধ্যায়নরত আছে। শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য যত ধরণের প্রচেষ্টা প্রয়োজন সবগুলোই করা হচ্ছে। এ বছর শেখ রাসেল ল্যাব পাওয়া গেছে। ১৭টি ল্যাপটপ রয়েছে। দুই শিফটে ছেলে মেয়েদের আধুনিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিজ্ঞান প্রযুক্তির সঙ্গে মিলিয়ে তাদের এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের মধ্যে দাঁড়িয়ে যাবে।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল আনিসুর রহমান আদিল জানান, আমাদের মাদ্রাসায় এ বছর ৩০জন পরীক্ষাথীর মধ্যে ৮ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। আমরা আশাবাদি ২০২৫ সাল নাগাদ এই প্রতিষ্ঠান শতভাগ এ প্লাস পাবে। এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
হবিগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ্ জানান, ‘উপজেলাভিত্তিক দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত চমৎকার একটি রেজাল্ট করেছে। তাদের জিপিএ ৫ সংখ্যাটা উপজেলার মধ্যে অনেক ভাল। লেখাপড়ার নিয়ম কানুনের দিক থেকেও পুরাতন মাদ্রাসা না হলেও অল্প সময়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন কারিকুলামের আলোকে আমাদের বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা তাও যেন বাস্তবায়িত হয়, আধুনিক শিক্ষায় আরেকটু দক্ষ হয়ে উঠে এই ব্যাপারে আমরা আমাদের জেলা ও উপজেলা থেকে মনিটরিং করছি। তাদের কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। সব সময় আমাদের সহযোগীতা তাদের জন্য আছে এবং থাকবে।’