প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় কারণে সিলেট অঞ্চল সবসময় আলাদা গুরুত্ববহণ করেছে। ১৭৭৮ গঠিত ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি হিসেবে পরিচিত সিলেট পৌরসভায় উন্নীত হয় আর ২০০২ সালের ২৮ জুলাই সিটি কর্পোরেশনে হয়। এরপর তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষা, উন্নয়নে এগিয়েছে সিলেট। তবে সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলে পরিবহণখাত নিয়ে নানামুখী সমস্যায় রয়েছে সিলেট সিটি। গণপরিবহন সংকট, অপ্রশস্ত সড়ক আর অতিরিক্ত প্রাইভেট পরিবহনের কারণে যানজট নগরে নিত্যসঙ্গী। নগরে যানজট নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলেও মিলছে না কোনো সুফল। উলটো এসব পরীক্ষা নিরীক্ষায় ভোগান্তিতে পড়ছেন মানুষ। সিলেট নগরীর যানজট, পরিবহণ সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন আহমদ ইমরান। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
সিলেটের বিভিন্ন সড়কে অবৈধভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশা। এসব সিএনজি অটোরিকশার অর্থনৈতিক মেয়াদকাল উত্তীর্ণ হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব সিএনজি অটোরিকশা এখন স্ক্র্যাপ (ধ্বংস করে ফেলা) করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন নীতিমালা। আর এই প্রয়োজনীয় নীতিমালা করে দেয়ার জন্য ২০১৬ সালে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার।
তবে ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন কমিশনার মো. কামরুল ইসলাম বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি প্রেরণ করলেও এখনো নীতিমালা আলোর মুখ দেখেনি। কিংবা নীতিমালা কোন অবস্থায় আছে সেটিও বলতে পারছে না কেউ।
সিলেট মেট্রো এলাকায় সিএনজি চালিত থ্রি হুইলার অটোরিকশা চলাচলের নীতিমালা প্রণয়ন ও সিলেট মেট্রো সার্কেলের কার্যক্রম চালুর প্রশাসনিক কার্যক্রম চালুর অনুমোদন শিরোনামে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। তবে এই চিঠি পাঠানোতেই থমকে আছে এসব সিএনজি অটোরিকশা স্ক্র্যাপ করার কাজ।
অন্যদিকে ২০১৪ সাল থেকে সিলেটে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রয়েছে। তবে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকলেও থেমে নেই সিএনজি অটোরিকশা বেচাকেনা। প্রতিদিনই নগরের বিভিন্ন সড়কে নামছে নতুন নতুন গাড়ি। সাথে মেয়াদ উত্তীর্ণ কিংবা ভাঙাচোরা গাড়ির পাশাপাশি আছে বৈধ সিএনজি অটোরিকশাও। এতে স্মার্ট সিটির বেশিরভাগ সড়কই সিএনজি অটোরিকশার দখলে। এর বাইরে নগরের বেশিরভাগ এলাকায় সড়ক দখল করে তৈরি করা হয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। এতে নগরে বাড়ছে যানজট, বাড়ছে ভোগান্তি।
যদিও পুলিশ কিংবা সিলেট সিটি কর্পোরেশন মাঝে মধ্যে এসব সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে। তবে অভিযানের পরপরই পুরনো রূপে ফিরে সড়ক। দখল আর উচ্ছেদের নিত্য-খেলায় অসহায় নগরবাসী।
পরিবহণ শ্রমিকরা বলছেন, সিলেটে সব মিলিয়ে ১০ হাজারের মতো সিএনজি হতে পারে। তবে বিআরটিএ কিংবা পুলিশ যে ১৮-২০ হাজার সিএনজির কথা বলছে তার হিসেব মেলানো যাচ্ছে না।
শ্রমিকরা আরও বলছেন, অনেক সিএনজি সিলেটের নাম্বার প্লেইট নিয়ে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজারে চলাচল করছে। এগুলো হিসেবে নিয়ে যদি হিসেব করা হয় তাহলে হয়তো ২০ হাজারের মতো সিএনজি হতে পারে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, সিলেট সিটিতে প্রায় ২২ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। যা সড়কের তুলনায় খুব বেশি। এখানে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার সিএনজি চলাচল করতে পারে। আর বেশি হলেই সিলেটে যানজট কিংবা অন্যান্য সমস্যা কমবে না।
অন্যদিকে বিআরটিএ সিলেট সূত্র জানায়, সিলেটের ১৯ হাজার ৩০২ টি সিএনজি অটোরিকশা নিবন্ধিত আছে। এরমধ্যে ২০০৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন হয়েছিল ২ হাজার ৭৯২ টি। অর্থনৈতিক মেয়াদকাল উত্তীর্ণ হওয়ায় এসব সিএনজি অটোরিকশা স্ক্র্যাপ করার কথা। এর বাইরে অনিবন্ধিত কিংবা দেরিতে নিবন্ধিত হওয়ায় আরও বেশি কিছু সিএনজি অটোরিকশার অর্থনৈতিক মেয়াদকাল শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা ৫ হাজারের মতো হতে পারে।
বিআরটিএ, সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. সানাউল হক বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের ইতোমধ্যে বেশ কিছু সিএনজি স্ক্র্যাপ করা হয়েছে। এসব সিএনজির অর্থনৈতিক মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ১৫ বছর। এটি রেজিস্ট্রেশনের তারিখ থেকে নয়। এই মেয়াদকাল গণনা করা হয় উৎপাদনের তারিখ থেকে। এই হিসেব করেই যেসব সিএনজির মেয়াদ ১৫ বছর হয়ে গেছে সেগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে হবে।
এদিকে অর্থনৈতিক মেয়াদ উত্তীর্ণ সিএনজির স্ত্র্যাপ করার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন সিলেটে অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের ইউনিয়নের (রেজি নং চট্ট-৭০৭) সাধারণ সম্পাদক মো. আজাদ মিয়া।
তিনি বলেন, সিলেটে যদি এমন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় তাহলে আমরা এটিকে স্বাগত জানাবো। তবে এ বিষয়ে এখনো কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি।
সিলেট মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির সভাপতি ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ বলেন, আমি নতুন আশার পরপরই এই বিষয়ে জানতে পেরেছি। এই চিঠি পাওয়ার পর আমি খোঁজ নিচ্ছি। আমি চাই দ্রুত একটি নীতিমালা হোক। যাতে অর্থনৈতিক মেয়াদ উত্তীর্ণ এসব সিএনজি অটোরিকশা স্ক্র্যাপ করা যায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের হিসেবে সিলেটে প্রায় ২২ হাজারের মতো সিএনজি চলাচল করছে। যা আমাদের সড়কের তুলনায় খুব বেশি। এগুলো কমিয়ে আনতে হবে। খুব বেশি হলে আমাদের সড়ক অনুযায়ী ১৫ হাজারের মতো সিএনজি অটোরিকশা চলতে পারে বলে আমার মনে হয়। আমরা চেষ্টা করছি- রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি যাতে সিলেটে চলাচল না করতে পারে। এই বিষয়ে আমরা খুব কঠোর অবস্থানে আছি।
বিআরটিএ সদর দপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. আজিজুল ইসলাম সিলেট ভয়েসকে বলেন, চিঠির বিষয়ে আমার কাছে জানা নেই। তবে আমি বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি।