রাশিয়ার ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে সারাবিশ্বেই জ্বালানি, খাদ্য-সংকট সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিরোধীদল সমালোচনা করলেও হতাশ হওয়া যাবে না।’ তবে এতে যদি ঘাটতির কোনও তথ্য থাকে সরকার সেটা গ্রহণ করবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শনিবার (২৩ জুলাই) জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন এবং বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পদক প্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমেরিকা রাশিয়ার ওপর ডলার আদান-প্রদানে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এতে শুধু বাংলাদেশ নয়, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক উন্নত দেশও ভুক্তভোগী বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই একটা সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের সার কেনা, খাদ্য কেনা অথবা জ্বালানি তেল কেনা, সবক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু আমরা না, সারা বিশ্বই একটা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে; এটা হলো বাস্তবতা।’
আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার ফল সবাই ভোগ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দেশে যেমন মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ঠিক তেমনিভাবে উন্নত দেশগুলোতে অনেক অনেক মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত ইউরোপ, আমেরিকার উন্নত দেশগুলোতেও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। আমি উন্নতে দেশগুলোর কথা বেশি বলবো। কারণ আমরাতো অনেক দূরে রয়ে গেছি কিন্তু তাদের অবস্থাই হচ্ছে এই ধরনের করুণ। সেখানে আমরা কোথায়! তারপরও বলবো প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সবাই স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করছে বলেই আমরা এখনো ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। তবুও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে, মিতব্যয়ী হতে হবে। অহেতুক অপচয় যাতে না হয়, সেই দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি এ ক্ষেত্রে পত্র-পত্রিকা নানা কথা লিখবে। টকশোতে অনেক কথা বলবে। বিরোধী দলও কথা বলবে। এটা বলাই তাদের কর্তব্য। তারা বলে যাক। আমাদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। যে আমরা সঠিক পথে আছি কিনা, সঠিকভাবে দায়িত্বপালন করছি কিনা, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিনা, দেশের গ্রামের সাধারণ মানুষ সঠিক সেবা পাচ্ছে কিনা? আমরা যদি সেইভাবে চিন্তা করি, তাহলে কে কি বলছে, সেই দিকে খুব বেশি একটা নজর দিতে হবে না।’
তিনি বলেন, ‘কে কী বললো সেটা শুনে হয়তো দেখতে পারি কোথাও আমাদের কোন ঘাটতি আছে কিনা। ওইটুকু আমরা নেব। কিন্তু ওই কথায় যেন বিভ্রান্ত না হন, কেউ যেন হতাশা না হন। এইটুকু বলবো। কেউ হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়েন সেই দিকে সচেতন হতে হবে। হতাশা হওয়ার মতো কিছু নেই। যখন যে অবস্থা হবে, সেই অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। তারপরও আমাদের নিজেদের যা কিছু আছে, তা নিয়ে চলবো।’
করোনাভাইরাসের মহামারির সময়েও দেশের অর্থনৈতিক গতি ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঠিক আজকে বিশ্বের কোনও দেশ এককভাবে চলতে পারে না। বর্তমান বিশ্ব হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ। একে অপরের ওপর আমরা অনেক ক্ষেত্রে নির্ভরশীল।’
দেশের মানবসম্পদ ও মাটি কাজে লাগাতে পারলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান সরকার প্রধান। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের অর্জিত অর্থ দিয়ে সকলের বেতন-ভাতা, আরাম, আয়েশ সবকিছু। তাই কাজ করতে হবে তাদের জন্য, তাদের স্বার্থে এবং কল্যাণে।’
প্রশাসনের কর্মকর্তারা যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা সরকার করে দিয়েছে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, ফ্ল্যাট, জমি ও গাড়ি সুবিধাসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘আপনাদের সংসারের চিন্তা অনেকটা লাঘব করে দিয়ে জনগণের চিন্তা যাতে করতে পারেন, সেই সুযোগটা যাতে সৃষ্টি হয়, সেই ব্যবস্থাও আমি নিয়েছি। বিস্তারিত এই ব্যাপারে বলতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘যাদের দিয়ে জনগণের দায়িত্ব পালন করাব, তারা যেন মন-প্রাণ ঢেলে জনগণের সেবা করতে পারে। সেইভাবে কাজ করেছি।’ প্রত্যেকটা কাজের জবাবদিহি নিশ্চিতে কর্মসম্পাদন চুক্তি করার হচ্ছে হয়েছে বলেও জানান সরকার প্রধান।
তৃণমূলের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি সরকারের মূল লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।