সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গুলিতে আহত মনমোহিনী বিশ্বাস, ৮৫ বছর বয়সে এখনো বুকি গুলি বয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও পান নি মুক্তিযোদ্ধা কিংবা বীরাঙ্গনা কোনো স্বীকৃতি।
মনমোহিনী বিশ্বাস সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের হাড়গ্রাম গ্রামের বাসিন্দা। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মুক্তিবাহিনীকে আশ্রয় দেয়া, রান্না করে খাওয়ানো ও সহযোগিতা করার কারণে স্থানীয় রাজাকারদের রোষানলে পড়ে মনমোহিনীর পরিবার। একদিন ভোররাতে স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় মনমোহিনীদের বাড়ি আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হত্যা করে পিতা হরকুমার বিশ্বাস ও মাতা প্রফুল্ল বিশ্বাসকে। বুকে গুলিবিদ্ধ হন মনমোহিনী নিজেও। প্রতিবেশীদের সহায়তায় বেঁচে যান তিনি।
তবে রাজাকারদের হুমকি আর পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে ছাড়তে হয় বাড়িঘর। এখন অন্যের বাড়িতে অনেকটাই নিঃস্ব জীবন কাটাচ্ছেন ৮৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা।
মনমোহিনী বিশ্বাস মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবরে লিখিত আবেদন দিয়েও কোনো ফল মেলেনি। ফলে মানবেতর জীবন যাপনই নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃদ্ধা মনমোহিনী বিশ্বাস অলস সময়ে ঝাপসা চোখে এখন শুধু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রোমন্থন করেন। তিনি মৃত্যুর আগে নিজের বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি দেখে যেতে চান।
জগন্নাথপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কাইয়ুম বলেন, হাড় গ্রামে পাকবাহিনী ভোররাতে হরকুমার বিশ্বাস ও প্রফুল্ল বিশ্বাসকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের মেয়ে মনমোহিনী বিশ্বাসও গুলিবিদ্ধ হন। তাকে সরকার থেকে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম বলেন, মনমোহিনীর ঘটনা শুনে আজও কান্না আসে। তাঁর বাবা-মাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁকে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত আমি মনে করি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রসরাজ বৈদ্য বলেন, মনমোহিনী বিশ্বাসের আরও আগে স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। না পাওয়াটা দুঃখজনক।
হাড় গ্রামের গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন, আমার পাশের বাড়ির ঘটনা এটি। সেদিন মনমোহিনীর বাবা-মাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মনমোহিনীও গুলিবিদ্ধ হন। অথচ সরকার থেকে আজ পর্যন্ত কোনো স্বীকৃতি পাননি তিনি।
মনমোহিনী বিশ্বাস বলেন, আমার বাবা-মাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমিও গুলিবিদ্ধ হই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন- আমার বয়স এখন ৮৫ বছর আর এই শেষ বয়সে ও মৃত্যুর আগে আমি সরকারি স্বীকৃতি দেখে যেতে চাই।