‘বিয়ের পর খায়রুনের কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা নেন মামুন’

বিয়ের পর নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক খায়রুন নাহারের (৪০) কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে মোট ২৪ লাখ টাকা নিয়েছিলেন মামুন হোসাইন (২২)। এর মধ্যে ২১ লাখ টাকা মৃত্যুর প্রায় তিন মাস আগে ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে দিয়েছিলেন খায়রুন। বাকি টাকা একটি এনজিও থেকে তুলে দেন। খায়রুন নাহারের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার বাদী তার চাচাতো ভাই সাবের উদ্দীন এই অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘খায়রুন তার কোনও বন্ধুকে টাকা দিয়েছিলেন, সেই বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সোনালী ব্যাংকের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় শাখার ম্যানেজার আমাকে বলেছিলেন, মৃত্যুর প্রায় তিন মাস আগে ওই ব্যাংক থেকে ১৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন খায়রুন। ওই সময় মামুন তার সঙ্গে ছিলেন। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক থেকে তিন লাখ ছাড়াও একটি এনজিও থেকে তিন লাখ টাকা তুলে মামুনকে দিয়েছিলেন। ওই টাকা দিয়ে তার বাড়িতে টিনশেড দুটি রুম করেন মামুন এবং আসবাবপত্র, ফ্রিজসহ কিছু জিনিসপত্র কেনেন। মৃত্যুর ১৮ দিন আগে তাকে মোটরসাইকেল কিনে দেন খায়রুন। এছাড়া ধান কিনে ব্যবসা করবেন বলে খায়রুনের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা নিয়েছিলেন মামুন।’

ঋণ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের গুরুদাসপুর শাখার ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান জানান, খায়রুন নাহার সোনালী ব্যাংকের চাঁচকৈড় শাখা থেকে ১৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন।

সোনালী ব্যাংকের চাঁচকৈড় শাখার ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান রাসেল জানান, মৃত্যুর প্রায় তিন মাস আগে খায়রুন নাহার ওই শাখা থেকে ১৮ লাখ টাকা তুলেছিলেন। টাকা তোলার গ্যারান্টার ছিলেন একই কলেজের শিক্ষিকা অঞ্জলি রায়। খায়রুন নাহারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার প্রায় ১৫ দিন পর কলেজের অধ্যক্ষ ও গ্যারান্টারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে খায়রুন নাহারের রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট থেকে ঋণের টাকা যাতে সমন্বয় করা হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

খায়রুন নাহারের ‘গ্যারান্টার’ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে শিক্ষিকা অঞ্জলি রায় জানান, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সময় খায়রুন্নাহার বলেছিলেন, টাকার প্রয়োজন, তাই ঋণ নিচ্ছি। এর বাইরে আর কিছু জানাননি তিনি।’

এদিকে খায়রুন নাহারের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার তার স্বামী মামুন জামিন পেয়েছেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর তার অস্থায়ী জামিনের আদেশ দেন সদর আমলি আদালতের বিচারক নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলজার রহমান। তবে বিষয়টি এতদিন গোপন ছিল। মামুনের জামিন পাওয়ার তথ্য শনিবার (১৫ অক্টোবর) নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার স্বপন।

তিনি জানান, মৃত্যুর ঘটনার পর খায়রুনের চাচাতো ভাই সাবের উদ্দীন একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। এই মামলায় মামুনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ১৫ আগস্ট জামিন আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর করেন বিচারক। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে অস্থায়ী জামিনের আদেশ দেন বিচারক।

জামিন ও ঋণ নেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ‘পরে কথা বলবো’ বলে কল কেটে দেন মামুন। এরপর কয়েকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি।

অপমৃত্যু (ইউডি) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) জানান, লাশের ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই পর্যন্ত অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর কলেজছাত্র মামুন ও শিক্ষিকা খায়রুনের বিয়ে হয়। বিয়ের বিষয়টি ৩১ জুলাই জানাজানি হলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর ১৪ দিন পর ১৪ আগস্ট সকালে নাটোর শহরের বলারিপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে খায়রুনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুনকে আটক করা হয়। পরে খায়রুনের চাচাতো ভাইয়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।