নেদারল্যান্ডসকে গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো লঙ্কানরা। জিম্বাবুয়ের হারারেতে রোববার ফাইনালে ১২৮ রানে জিতেছে দাসুন শানাকার দল। ২৩৩ রানের পুঁজি নিয়ে ডাচদের তারা গুটিয়ে দিয়েছে স্রেফ ১০৫ রানে।
তবে বাছাইয়ের ফাইনালে উঠেই ভারত বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডস।
বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার অভিযানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ১৭৫ রানের জয় দিয়ে বাছাই শুরু করে শ্রীলঙ্কা। এরপর ফাইনালসহ মোট ৭টি ম্যাচের সবগুলোই জিতল ১৯৯৬ আসরের শিরোপাজয়ীরা।
ফাইনালে শ্রীলঙ্কার জয়ের নায়ক দিলশান মাদুশঙ্কা। অল্প পুঁজি নিয়ে বল হাতে শুরুতেই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেন তিনি। স্রেফ ১৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া এই পেসার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
অবদান কম নয় দুই স্পিনার মাহিশ থিকশানা ও ভানিন্দু হাসারাঙ্গারও। ৩১ রানে সর্বোচ্চ ৪টি শিকার ধরেন থিকশানা। হাসারাঙ্গার প্রাপ্তি দুটি।
হারারে স্পোর্টস ক্লাবে টস হেরে ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো হয়নি শ্রীলঙ্কার। ৪৪ রানে সাদিরা সামাবিক্রমা ও পাথুন নিসানকাকে হারায় তারা। দুই ওপেনারই বিক্রমজিত সিংয়ের শিকার।
চাপে পড়া দলের হাল ধরেন কুসাল মেন্ডিস ও সাহান আরাচিগে। দুইজনে গড়েন ৭২ রানে জুটি। তাদের প্রতিরোধ অবশ্য দুই দফায় ভাঙার সুযোগ পায় নেদারল্যান্ডস, কিন্তু একবারও পারেনি কাজে লাগাতে।
জুটির রান সবে যখন ৫, মেন্ডিসের ফিরতি ক্যাচ ছাড়েন বিক্রমজিত। ৪ রানে জীবন পাওয়া লঙ্কান ব্যাটসম্যান বেঁচে যান আরেক দফায়, ৩৪ রানে; সাকিব জুলফিকারের বলে তার ক্যাচ নিতে পারেননি ডিপ স্কয়ার লেগ ফিল্ডার।
জুলফিকারই পরে এলবিডব্লিউ করে বিদায় করেন ১ ছক্কা ও ৫ চারে ৪৩ রান করা মেন্ডিসকে। এরপর আরাচিগের সঙ্গে ৬৪ রানের জুটি গড়ে দলের রান দুইশর কাছে নিয়ে যান চারিথ আসালাঙ্কা।
ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ইনিংসেই ফিফটির স্বাদ পান আরাচিগে। ৪টি চারে ৫৭ রান করে ফেরেন তিনি জুলফিকারের বলে। এবারের বাছাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হলেও ওই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি আরাচিগে।
জুলফিকারের ওই ওভারেই রান আউট হয়ে যান আসালাঙ্কা (৪টি চারে ৩৬)। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, দাসুন শানাকা দ্রুত বিদায় নিলে ৩ উইকেটে ১৮০ থেকে শ্রীলঙ্কার রান হয়ে যায় ৭ উইকেটে ১৯০। এরপর তারা দুইশ পার করে মূলত হাসারাঙ্গার ১ ছক্কা ও ২ চারে ২১ বলে ২৯ রানের ইনিংসে।
রান তাড়ায় ডাচদের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। ৪৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে বলা যায় ছিটকে পড়ে তারা। আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি। নিজের টানা তিন ওভারে বিক্রমজিত, ওয়েসলি বারেসি ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষিক্ত নোয়া ক্রোসকে ফিরিয়ে দেন মাদুশঙ্কা। মাঝে তেজা নিদামানুরুকে বিদায় করেন হাসারাঙ্গা।
অনেকটা সময় লড়াই করে একটি করে ছক্কা-চারে তাদের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন মাক্স ও’ডাওড। ও’ডাওড ছাড়া নেদারল্যান্ডসের হয়ে দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেন আর কেবল দুইজন। রানের খাতা খুলতে পারেননি তাদের তিন ব্যাটসম্যান।
আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ আসর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
শ্রীলঙ্কা : ৪৭.৫ ওভারে ২৩৩ (নিসানকা ২৩, সামারাবিক্রমা ১৯, মেন্ডিস ৪৩, আরাচিগে ৫৭, আসালাঙ্কা ৩৬, ধনাঞ্জয়া ৪, শানাকা ১, হাসারাঙ্গা ২৯, থিকশানা ১৩, পাথিরানা ৪, মাদুশঙ্কা ০*; ফন বিক ১০-০-৪০-২, ক্লেইন ৯-১-৪২-২, আরিয়ান ৯.৫-০-৫১-১, বিক্রমজিত ৪-০-১২-২, ফ্লয়েড ৫-০-২৮-০, জুলফিকার ১০-১-৫৯-২)
নেদারল্যান্ডস : ২৩.৩ ওভারে ১০৫ (বিক্রমজিত ১৩, ও’ডাওড ৩৩, বারেসি ০, নিদামানুরু ০, ক্রোস ৭, এডওয়ার্ডস ১, জুলফিকার ৬, ফন বিক ২০*, ক্লেইন ২, আরিয়ান ০, ফ্লয়েড ৯; মাদুশঙ্কা ৭-১-১৮-৩, থিকশানা ৬.৩-১-৩১-৪, হাসারাঙ্গা ৭-১-৩৫-২, পাথিরানা ৩-০-১৬-০)
ফল : বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ফাইনালে শ্রীলঙ্কা ১২৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ : দিলশান মাদুশঙ্কা